হালদার নজরদারি বাড়াতে নতুন দুটি স্থাপনসহ নষ্ট সিসি ক্যামেরা মেরামত

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর মা মাছ, গাঙ্গেয় ডলফিন তথা জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় স্থাপন করা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলোর মধ্যে নষ্টগুলো মেরামত করা হয়েছে। প্রজনন মৌসুমে নজরদারি বাড়ানোর জন্যই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছে নৌ পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৮টি উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নদীর গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন এলাকা হাটহাজারীর মদুনাঘাট থেকে আমতুয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার নজরদারি করে আসছিল নৌ পুলিশ। বছর খানেক আগে দুটি নষ্ট হয়েছিল, সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে চারটি নষ্ট হয়ে যায়।

বুধবার (১৫ মে) নষ্ট হওয়া ক্যামেরার খুঁটিতে দুটি নতুন ক্যামেরা বসানোসহ চারটি ক্যামেরা মেরামত করা হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নৌ পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ.ফ.ম.নিজাম উদ্দিন পিপিএম। তিনি জানান, হালদায় স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুলিশ ফাঁড়ি এবং নৌ পুলিশের ঢাকায় অবস্থিত উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে হালদার নজারদারি করা হয়। এর ফলশ্রুতিতে নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কারেন্টজাল পেতে মা মাছ শিকার, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ফলে হালদা নদীর মা মাছের সুরক্ষার পাশাপাশি গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যু হার হ্রাস পায়। তবে প্রজনন মৌসুমে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনী প্রদক্ষেপ গ্রহণসহ প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণে তাগাদা দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

হালদা বিশেষজ্ঞ ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে হালদা থেকে বালু উত্তোলন এবং বালুবাহী ড্রেজার, যান্ত্রিক নৌ চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে নদীতে জাল পাতার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর আগে থেকেই আমরা হালদার জীব-বৈচিত্র্য তথা মা মাছ রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছি। সিসি ক্যামেরা বাড়ানো গেলে হালদার নদীতে অসাধুদের অপতৎপরতা কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, হালদা পাড়ের মানুষদের সচেতন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও প্রশাসনের নজরদারি কারণে গত বছর গাঙ্গেয় ডলফিন বা মা মাছের মৃত্যু হয়নি। নিরাপদ হালদায় চলতি মৌসুমে নমুনা ডিমের চেয়ে বেশি পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা মাছ। আগামী তিনটি জো’তে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ী ঢল সৃষ্টি হলে পুরোদমে এবং প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিমাণ ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ।

প্রসঙ্গত, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছিল। তাই ‘তদারকি কমিটির অনুমতি ব্যতিরেকে নতুন পানি শোধনাগার, সেচ প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন না করাসহ নদী সুরক্ষায় ১২টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ির রামগড় ও মানিকছড়ির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৯৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে হালদা নদী তীরের ২৩ হাজার ২২ একর জমিসহ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী ও পাঁচলাইশ বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজের অধীনে আছে।