সত্য ঘটনায় নির্মিত, দর্শক কাঁদানো ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা

মাত্র ২০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত সিনেমা ‘টুয়েলভথ ফেল’ এক অনন্য গল্পের কাহিনী।  সম্প্রতি ওটিটিতে মুক্তি পাওয়ার পর হইচই ফেলে দিয়েছে এই সিনেমা।  সিনেমাটি ইতিমধ্যে ৬০ কোটির বেশি রুপি ব্যবসাও করেছে।

ভারতের কোটি কোটি তরুণের জীবনের প্রতিনিধি হয়ে পর্দায় এসেছেন মনোজ, ফলে দর্শকেরা খুব সহজেই গল্পের মধ্যে ডুবে গেছেন।  ভারত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও সিনেমাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ শর্মা ও আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশি দম্পতির জীবনের গল্প নিয়ে ২০১৯ সালে ‘টুয়েলভথ ফেল’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন দেশটির ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠক।  সেই উপন্যাস অবলম্বনে ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা নির্মাণ করেন বিধু বিনোদ চোপড়া।

আর্থিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সঙ্গী করে বেড়ে ওঠেন মনোজ।  পড়াশোনার পাশাপাশি অটো রিকশাও চালাতেন তিনি।  দ্বাদশ শ্রেণিতে হিন্দি ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেন তিনি।  পরে অনেক কষ্টে পাস করেন।  এর মধ্যেই একবার এক পুলিশ কর্মকর্তা মনোজর অটোটি আটক করেন।  পরে থানায় গিয়ে অটোটি ছাড়িয়ে আনতে যান তিনি।  সেখানে একটি সাক্ষাৎ বদলে দেয় তার জীবনের প্রথম গতিপথ।  কীভাবে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় সবকিছু ওই আলোচনায় উঠে আসে।  এরপর মনজ স্বপ্ন বুনেন আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার।

ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন চেপে বসে মধ্য প্রদেশের এই দ্বাদশ ফেল ছেলেটির মাথায়।  পাড়ি দেন গোয়ালিয়র।  প্রথমে ছোট-খাটো কাজ করে লড়াই শুরু করেন মনোজ।  এ সময় তার মাথার ওপর ছাদটুকুও ছিল না।  ফুটপাথে ভিখারিদের সঙ্গে ঘুমাতে হয়েছে মনোজকে।  একটা সময় লাইব্রেরিতে পিয়নের কাজ পান তিনি।  আর সেই কাজের জন্যই বই পড়ার সুযোগ পান তিনি। আর এটিই তাকে নতুন পথ দেখায়।  সময় পেলেই পড়াশোনা করে মনোজ।  প্রস্তুতি নিতে থাকে ইউপিএসসির জন্য।

পরে সেখান থেকে শত প্রতিকূলতা পার করে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে মধ্য প্রদেশ থেকে দিল্লিতে পৌঁছান মনোজ।  সেখানে ধনী পরিবারের কুকুরদের দেখভালের মতো কাজও করতে হয়েছে তাকে। তবে লড়াই বন্ধ হয়নি।  এই লড়াইয়ের যাত্রায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ছেলেটির জীবনে আসে উত্তরাখন্ডের মেয়ে শ্রদ্ধা জোশি।  তার সব সময়ের সঙ্গী ছিলেন প্রেমিকা শ্রদ্ধা।  তিনিও চাকরির পরীক্ষা দিতে দিল্লি যান।  প্রথমবারেই আইআরএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান শ্রদ্ধা।

তবে তিনবার চেষ্টা করেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি মনোজ। শ্রদ্ধার অনুপ্রেরণায় চারবারের চেষ্টায় আইপিএস এর চাকরিটা পেয়ে যান তিনি।  ২০০৫ সালে মনোজ শর্মাকে বিয়ে করেন বিয়ে করেন শ্রদ্ধা। বর্তমানে এই দম্পতির ঘরে চিয়া ও মানস নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।