‘৫ বছর বয়সী কোমলমতি শিশু আয়াতকে অপহরণ, হত্যা এবং লাশ গুমের জন্য মধ্যযুগীয় কায়দায় ছয় টুকরো ও প্যাকেট ভরে সাগরে-নালায় ভাসিয়ে দেওয়ার নৃশংস ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রবল শংকিত। আমরা কোন সমাজে বাস করছি? ঘরে-বাইরে শিশু ও নারী কোথাও এক মুহূর্ত নিরাপদ নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্র ও সরকারের। অথচ শিশু ও নারী অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা অব্যাহত গতিতে বাড়ছে। এখন যুক্ত হয়েছে নৃশংস কায়দায় হত্যা। বিচারহীনতা, মাদক, পর্নোগ্রাফি, নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এ ধরণের ঘটনা বাড়ছে। আমরা রাষ্ট্র, সরকারের কাছে দাবি জানাই, এগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে। পাশাপাশি শিশু নারী হত্যা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সমাজের সবাইকে আহবান জানাচ্ছি।’
রোববার ((২৭ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে আয়াত, বর্ষাসহ সকল শিশু হত্যার দ্রুত বিচার ও শিশুদের নিরাপত্তার দাবিতে শিশু কিশোর সংগঠন শিশু কিশোর মেলা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন ।
মানববন্ধনে শিশু বর্ষার পরিবার ও এলাকাবাসী, নারী অধিকার কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন। শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রামের সংগঠক পুষ্পিতা নাথের সভাপতিত্বে ও আবদুল আল জাওয়াদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য্য সোমা, নারী যোগাযোগ কেন্দ্রের আহবায়ক সালমা জাহান মিলি, সদস্য লেখিকা মহুয়া ভট্টাচার্য্য, অভিভাবক সোলায়মান খান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক, ধর্ষিত ও নিহত শিশু বর্ষার বড়বোন সালেহা আক্তার রুবি, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সানজিদা তারিন, শিশু কিশোর মেলার সংগঠক লাবনী আক্তার শ্রাবণী বিশ্বাস, অর্পিতা নাথ প্রমুখ।
সমাবেশে গত অক্টোবরে জামালখানে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া শিশু বর্ষার বড় বোন সালেহা আক্তার রুবি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘বর্ষাকে হারানোর শোকে আমাদের পরিবার এখনও স্তব্ধ। তাই বুঝতে পারি, আয়াতের মা-বাবার কি মানসিক অবস্থা হতে পারে! আমরা বর্ষা, আয়াত হত্যার দ্রুত বিচার চাই, যাতে আর কোন শিশুকে হারাতে না হয়।’
ইন্দ্রানী সোমা বলেন, রাষ্ট্রে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতার ফলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে,যার ফলে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ নেমে আসছে শিশু ও নারীদের উপর। এছাড়া নেই কোন সুস্থ বিনোদন, খেলাধূলা ও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা। বরং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মাদক,জুয়া, পর্ণোগ্রাফি, অশ্লীলতা-অপসংস্কৃতি প্রসার তরুণ যুবকদের চরিত্র-মনুষ্যত্ব ধ্বসিয়ে দিয়ে পশুতে পরিণত করছে। রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ফলে ৫ বছরের শিশুকন্যা হতে ৭০ বছরের বৃদ্ধা কেউ আর নরপশুদের হাতে নিরাপদ নেই।
নেতৃবৃন্দ শিশু আয়াত, বর্ষাসহ সকল শিশু হত্যার দ্রত বিচার, নগরীতে শিশু ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।