রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষ আহত ২০

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের বিজয়ী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও গাড়ি এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।একইসাথে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।স্থানীয়রা জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করেন দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারসহ তার লোকজন। দুপুরে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে কম্বল বিতরণের আয়োজন করেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার। একই সময় দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের গেটের সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী আলোচনা সভার আয়োজন করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থিত স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।একই জায়গায় পাশাপাশি দুটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের লোকজন জমায়েত হতে থাকে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা, ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একটি পক্ষের হামলাকারীরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারের ব্যবহৃত গাড়িতেও আগুন দেয়া হয়।একপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ভেতরে নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারসহ তার লোকজন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে অন্য পক্ষের হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে থাকা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনাও ঘটে।

এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা চলে যান। খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং অবরুদ্ধ নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারকে উদ্ধার করেন। এছাড়া পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে গাড়ির আগুন নেভান।দাউদপুর পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, এলাকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে শীত বস্ত্র বিতরণ করতে এখানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো। কোনো কিছু বোঝার আগেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গেট ভেঙ্গে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে এবং গাড়ি ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। চেয়ার টেবিল, ইউনিয়ন পরিষদের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। তাদের মারধরে আমাদের অনেক লোকজনকে গুরুতর আহত হয়েছেন। আমি এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।তবে দাউদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী পরবর্তী আলোচনা সভার আয়োজন করি। সেখানে নেতাকর্মীরা বসেছিলেন। এ সময় নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা করেন। আমাদের লোকজনকে মারধর করা হয়েছে। এ সময় তারা অফিসে থাকা চেয়ার টেবিল, বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গোলাম দস্তগীর গাজীর টানানো ছবি ভাঙচুর করেন।রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপঙ্কর চন্দ্র সাহা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।