মেগা প্রকল্পে মেগা ঝামেলা

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প

চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি অর্থায়নে চলছে মেগা প্রকল্প।  মেগা ঝামেলা মাথায় নিয়ে চলছে মেগা প্রকল্পের কাজ।  সহসা সুফল না মিললেও নানা জটিলতায় জলাবদ্ধতা প্রকল্পের মেয়াদ আরও লম্বা এবং ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।  আগামী বর্ষা মওসুমে নগরের আংশিক এলাকা জলাবদ্ধতা থেকে সাময়িক নিস্তার পেলেও স্থায়ী সুফল পেতে হলে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, অর্থ প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা, খাল,নালা-নর্দমাঘেঁষে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো অপসারণ না করা, নগরের আরও ১৩শত কিলোমিটার নালা সংস্কার ও নিয়মিত পরিস্কার না রাখা, ২১ খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ না নেওয়া, নাগরিক অসচেতনতা,অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাধার সংরক্ষণে উদাসীনতা, সেবামূলকক সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা এবং একে অপরের উপর দোষারোপের সংস্কৃতিসহ মেগা ঝামেলার কারণে জলাবদ্ধতার সুফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের।  কর্ণফুলীর নাব্যতা হ্রাস, বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ জোয়ারের কারণে নগরের বুক ছিড়ে প্রবাহিত খাল ও নালা-নর্দমায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার কারণে নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।  বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নগরের কমপক্ষে ২১টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।  বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বৃহত্তর বাকলিয়া, হালিশহর, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, মোহরা, চকবাজার, শুলকবহর, ষোলশহর, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকা ও তৎসংলগ্ন এলাকার জনসাধারণ।  চট্টগ্রামের বানভাসি মানুষকে জলাবদ্ধতা, অতি জোয়ার এবং বন্যার কবল থেকে মুক্তি দিতে পরিকল্পিত উন্নয়নের তদারকি সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৯৯৫ সালে ২০ বছরমেয়াদী একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছিলো।  ওই মাস্টার প্ল্যানে জলাবদ্ধতা থেকে নিস্তার পেতে করণীয় এবং সুপারিশমালা তুলে ধরা হলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর করা যায়নি।  পরবর্তীতে নগরের জলজট এড়াতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও ’৯৫ এর মাস্টার প্ল্যানকে বিবেচনায় রেখে কাজ করেনি কোনো সংস্থা।  বরং সরকারি সংস্থাগুলো একে অন্যের উপর দোষ চাপানোর সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ে।  চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেন (চসিক) বিচ্ছিন্নভাবে বিশেষ কিছু খাল ও নালা-নর্দমা সংস্কার করলেও অর্থ গেছে জলে, দুর্ভোগ কমেনি নগরবাসীর।

কার কি প্রকল্প: চট্টগ্রাম শহরের বানভাসি মানুষকে বাঁচাতে তিন সরকারি সংস্থা জলাবদ্ধতা নিরসনে নয় হাজার ৫২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।  এর মধ্যে দুটি সিডিএর, একটি সিটি করপোরেশনের এবং অন্যটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের।  তিন বছরের মধ্যে (২০১৭-২০১৮ হতে ২০১৯-২০২০) জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষে সিডিএ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে।  সংস্থাটি ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক আরও একটি প্রকল্প নেয় ২০১৭ এর জুলাইয়ে।  প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অতি জোয়ার ও জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।  সিডিএ’র ১৯৯৫ এর মাস্টার প্ল্যানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ‘বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ প্রকল্প গ্রহণ করে।  এটিও সিডিএ প্রণীত ১৯৯৫ এর মাস্টার প্ল্যানের আওতাভুক্ত।  পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বাস্তবায়ন করছে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প।সবমিলে চার প্রকল্পের ব্যয়সীমা সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

সিডিএর ঘাড়ে মেগা প্রকল্প: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ২০১৭ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করলেও নানা জটিলতায় বাড়ে মেয়াদ ও খরচ।  সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগে প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন, ডিপিপিতে নানা ক্রুটি ও অসংগতি প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বৃদ্ধি ও ব্যয় বাড়ে।  কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী জুনে শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।  মেয়াদ বাড়ছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত।  মেয়াদের সাথে পাল্লা দিয়ে খরচ বাড়ছে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা।

সিডিএ ২০১৮ এর এপ্রিলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।  সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ওই বছরের এপ্রিলের শেষদিকে দায়িত্ব নিয়েই মাঠে নেমে পড়ে।  সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকলেও প্রত্যশা অনুযায়ী কাজের গতি বাড়াতে পারেনি।  ইতোমধ্যে তিনজন পিডি পরিবর্তন হয়েছে।  বর্তমানে কত দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করে বোঝা হালকা করবে সেই পথ খুঁজছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষে ২০১৭ সালে গৃহীত এ প্রকল্পের আওতায় ৫৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের তথ্য উল্লেখ রয়েছে।  কিন্তু সিডিএ সেনাবাহিনীকে এক কাঠা জায়গাও বুঝিয়ে দিতে পারেনি।  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাঈনুদ্দীন আহমেদ।  তবে সেনাবাহিনী প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের বুঝিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করেছে।  এই প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, একশত ৬২ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৩০২ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কার ও উন্নয়ন,পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর (স্লুইস গেইট) নির্মাণ, ৫৫টি ব্রীজ-কালভার্ট তৈরী, ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ঘনমিটার খালের কাদা অপসারণ, ২১ লাখ ৭৭ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন।  এ ছাড়া আরও বেশ কিছু কাজ প্রকল্পের অঙ্গভুক্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৩৬টি খালের মধ্যে ১৪টি খালে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।  এ পর্যন্ত একশত ১৫ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ১৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।  আরও পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা যাবে।  কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ ও অর্থ সংস্থানের অভাবে প্রকল্পভুক্ত আরও ১৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ আটকে থাকবে।  সরেজমিনে দেখা যায়, দুই দশমিক ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ (দুই পাশে পাঁচ দশমিক ২৮ কি.মি.) ত্রিপুরা খালের প্রায় কাজ শেষ হলেও মাঝখানে দুই পাশে দুইশত মিটার করে প্রায় চারশত মিটার এলাকায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা যাচ্ছে না।  যার কারণে সংশ্লিষ্ট খালের একটি অংশের মানুষ জলাবদ্ধতার সুফল পেলেও আরেকটি অংশ সুফল থেকে বঞ্চিত হবে।  আবার মহেশখালের ওপর স্লুইস গেইটের কাজ শেষ হওয়ায় নগরের বৃহত্তর হালিশহর ও আগ্রাবাদ এলকার বাসিন্দাদের অন্ততপক্ষে আগামী বর্ষা মওসুমে নীচতলা ছেড়ে দোতলায় উঠতে হবে না।

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে হিজরা খাল,চাক্তাই খাল, ত্রিপুরা খাল, ঝর্ণা খাল,বাইন্যা ছড়া খাল, বাকলিয়া খাল, চাক্তাই ডাইভারশেন খাল, জামাল খাঁন খাল, নোয়া খাল, বির্জা খাল, মির্জা খাল-এসব খালের অনেক জায়গায় সম্প্রসারণ, রিটেইনিং ওয়াল ও সড়ক নির্মাণ করা যাচ্ছে না।  তবে জলাবদ্ধতা থেকে নিস্তার পাবে খাতুনগঞ্জ, বহদ্দারহাট, মরাদপুর, চকবাজার, অক্সিজেন মোড়ের একাংশ ও প্রবর্তক মোড় এলাকা।  চাক্তাই খালের ওপর সিডিএর অন্য প্রকল্পের অঙ্গভুক্ত রেগুলেটরের কপাট না লাগালে জোয়ারের পানিতে ডুববে এতদঞ্চলের বাসিন্দারা।

এ প্রকল্পের বেশ কিছু খালের তীরঘেঁষে রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, তার ও টেলিফোন বোর্ড, ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানী লিমিটেডের নানা অবকাঠামো।  এসব অবকাঠামোর কারণে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।  এ বিষয়ে অবহিত করে চার সংস্থাকে স্থাপনা অপসারণে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।  ওয়াসা সাড়া দিলেও অন্য সংস্থাগুলোর সাড়া নেই।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল মো. শাহ আলী জানান, আগামী মে মাসের মধ্যে আরও ১০টি খালের খনন, সম্প্রসারণ ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ শেষ হবে।  তবে প্রকল্পক্তুক্ত ১২টি খালের পুরোপুরি খনন, সম্প্রসারণ এবং রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ করা যাবে না যথাসময়ে। প্রতিবন্ধকতা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো কোনো খালে একশত মিটার আবার কোনো কোনো খালে পাঁচশত থেকে ছয়শত মিটার খনন, রিটেইনিং ওয়াল করা যাচ্ছে না ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে।  এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে হলে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হতে হবে।  অন্য প্রকল্পগুলোর কাজও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।  দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রত্যশা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না পেলেও সাধ্য মতো কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, খাল খনন করে গেলে কেবল জলাবদ্ধতার সুফল মিলবে না, এগুলোর নিয়মিত পরিস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে।  ৩৬ খালের সাথে আরও ২১টি খাল রয়েছে।  এসব খাল উদ্ধার করে পানি নিষ্কাশন প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা না গেলে মিলবে না জলাবদ্ধতা প্রকল্পের শতভাগ সুফল।  এর জন্য বাড়াতে হবে ওয়ার্ডভিত্তিক জনসচেতনতা।  এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে।

জলাবদ্ধতা প্রকল্প সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ এ প্রতিবেদককে বলেন, নগরে যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে সিটি করপোরেশন তার সব অপসারণ করতে পারছে না।নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাইরে থাকা খালগুলো উদ্ধার না করা, নালা-নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে যাচ্ছে।  তবে সিডিএর প্রকল্প বাস্তবায়নশেষে এর রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে জলাবদ্ধতা সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে মনে করেন এ প্রকৌশলী।  তিনি জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্যে ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।  প্রকল্পের মেয়াদ এবং ব্যয় দুটোই বাড়ছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্পে বাঁধা অর্থ ও ভূমি: চসিক সূত্রে জানা যায়,‘বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী’ পর্যন্ত খাল খনন কর্মসূচি আওতায় দুই দশমিক নয় কিলোমিটার খাল খনন, খালের ৬৫ ফুট প্রশস্তকরণ, খালের দুই পাশে ২০ ফুট প্রশস্ততার পাঁচ দশমিক ৮০ কিলোমিটার সড়ক তৈরী, সাথে আরও পাঁচ ফুট ফুটপাত তৈরী এবং প্রতিরোধ দেওয়াল তৈরীর নকশা রয়েছে।  পুরো কাজ শেষ করতে ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন।  প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পূর্ব শুলকবহর, পশ্চিম শুলকবহর, চান্দগাঁও, নাসিরাবাদ, মোহরা, পশ্চিম ষোলশহর, বাকলিয়া, চাক্তাই এলাকা সংলগ্ন এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার কবল থেকে নিস্তার পাবে।  ডিপিপি অনুযায়ী ২০১৭ এর জুনে শেষ হওয়ার সময়সীমা থাকলেও ওই সময়ে মাঠেও গড়ায়নি প্রকল্পের কাজ।  কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে আগামি বছরের জুন পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়েছে প্রকল্পের বাস্তবায়নসীমা।  ইতোমধ্যে নগর পিতার আসনে বসেছেন তিনজন।

সর্বশেষ প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।  এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১১৮ কোটি টাকা।  অবশিষ্ট দুইশত ৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা অবকাঠামোগত উন্নয়নে।  সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ পাওয়া ৯১৪ কোটি টাকার মধ্যে ৯১১ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।  আরও দরকার দুইশত কোটি টাকা।  চসিক এ পর্যন্ত প্রকল্পের আওতাভূক্ত ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে পেরেছে।  আরও ১০ একর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  জটিলতা রয়ে গেছে বাকি পাঁচ একর ভূমি অধিগ্রহণে।  ভূমি অধিগ্রহণ করা না গেলে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় দুটোই বাড়বে।  তাই সহসা এ প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।

চসিক সূত্রে জানা যায়, চরম অর্থ সংকটে ভুগছে প্রকল্পটি।  সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী প্রকল্পের ঠিকাদারদের বুঝিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।  গত বছরের আগস্টে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য দুইশত সাত কোটি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আরও একশত কোটি অর্থ সংস্থান চেয়ে চিঠি লিখলেও এখনও জবাব মেলেনি।  কর্তৃপক্ষের আশা জুনের মধ্যে মিলতে পারে টাকা।

চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশান-৩) ও প্রকল্প পরিচালক মো. ফরহাদুল আলম জানান, শুরুতে প্রকল্পে সিটি করপোরেশন ও সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পের বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বর্তমানে পুরো প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে।  ‘বি’ ক্যাটাগরীর প্রকল্প হিসেবে আগামী জুনের মধ্যে চাহিত অর্থের ৭৫ শতাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  তিনি জানান, প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ধরা হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণে।  ভূমি অধিগ্রহণের পুরো টাকা পাওয়া গেলে গতি আসবে উন্নয়ন কাজে।  যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে চসিকের এই কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ২৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।  তিনি আরও জানান, নগরের বাকরিয়া বগারবিল, অন্যন্যা আবাসিক এলাকায় সিডিএ আবসানের অনুমতি দিয়ে প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাটের সুযোগ দিয়েছে।  প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সংরক্ষণ না করা জলাবদ্ধতার সৃষ্টির একটি বড় কারণ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা: চট্টগ্রাম মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা, জলবদ্ধতা নিরসন, নিষ্কাশন, উন্নয়ন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য চট্টগ্রামের খালগুলোর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৯ এর এপ্রিলে। প্রথম দুই বছর কাজও শুরু করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।  চার বছরমেয়াদী এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের জুনে।  প্রকল্পের বর্তমান অনুমোদিত ব্যয় এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।  এ প্রকল্পের আওতায় দুই দশমিক সাতশত কিলোমিটার প্রতিরোধ দেওয়াল, ১৮ দশমিক ৯৬৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রক দেওয়াল, এক কিলোমিটার খালের তীর সংরক্ষণ এবং ২৩টি স্লুইস গেইট (রেগুলেটর) স্থাপন করা হবে। প্ রয়োজন ছয় হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুমোদন মিললেও ওই সময় জোটেনি এক টাকাও।  চলতি অর্থবছর পর্যন্ত তিনশত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে।২৩টি স্লুইস গেইটের (রেগুলেটর) মধ্যে চারটির নির্মাণ কাজ শেষ, দুটি চলমান।  তবে কোনো স্লুইজ গেইটের দরজা লাগেনি এখনও।  বর্ষা মওসুমের আগে চারটি স্লুইস গেইটের দরজা লাগিয়ে পানির জোয়ারের পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।  বাকি রয়েছে ১৪টি।  তবে নকশা থেকে বাদ পড়তে পারে আরও কয়েকটি স্লুইজ গেইট।  সবমিলে জোয়ারের পানি প্রবেশের শংকা রয়ে গেছে।

প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ওঠে এসেছে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা সমস্যা।  খোদ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ড্রাইডক আপত্তি দিয়েছে।  প্রকল্পটির প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ বার্থিং হয় এরকম সব জেটি বাদ দিয়ে ডিপিপি প্রণয়নের সুপারিশ করা হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তা পুরোপুরি আমলে নেয়নি।  প্রকল্পভুক্ত করা হয় পনেরো নম্বর ঘাট থেকে বানৌজা ঈশা খাঁ ঘাটি পর্যন্ত আট কিলোমিটার অধিক এবং বাংলাবাজার থেকে শাহ আমানত সেতু (কর্ণফুলী ব্রীজ) পর্যন্ত চার কিলোমিটার মিলে সর্বমোট ১২ কিলোমটারের বেশি এলাকা, যেখানে রয়েছে বন্দরের জেটি।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের আপত্তির কারণে এ অংশটুকু প্রকল্পের বাইরে কাজ ঘুটাতে হবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।  সবমিলে আগামী জুনের মধ্যে শেষ হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নকশা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ করা না গেলে ফেরত যেতে পারে অর্থ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী।  প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এইচ এম মোহাইমিন বিল্লাহ চৌধুরী বলেন, এখনও পর্যন্ত নকশা অনুযায়ী ২৩টি রেগুলেটর রয়েছে,পরবর্তীতে ডিপিপি সংশোধন হলে কিছু বাদ যেতে পারে।  বন্দরের আপত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে, নিশ্চয় একটি গ্রহনযোগ্য এবং ইতিবাচক সমাধান বেরিয়ে আসবে।  পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার বিষয় স্বীকার করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এবং ড্রাইডকের আপত্তির কারণে ভূমি অধিগ্রহণ করা যাচ্ছে না।  করোনায় দুই বছর কোনো কাজ করা যায়নি।  আরও এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হবে।  চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অবকাঠামোগত অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ।

সিডিএ প্রকল্পের অগ্রগতি: ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল’ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক, দুই দশমিক ৫০ মিটার হতে নয় দশমিক ৪০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট ও ২৪ দশমিক ৮০ মিটারবিশিষ্ট শহর রক্ষা বাঁধ কাম সড়ক, ১২টি রেগুলেটর (স্লুইসগেইট), সাতটি পাম্প হাউস তেরী, ১২টি জলাধার তৈরী, পাঁচ হাজার ৭৭৬ মিটার রিটেইনিং ওয়াল, পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের নকশা রয়েছে।  জলাধারসহ সড়ক নির্মাণের জন্য ৪৭ দশমিক ৫৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।  এরমধ্যে সড়ক নির্মাণে প্রয়োজন ৪২ দশমিক ৬০ হেক্টর ভূমি।  আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, নয় কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে সাত কিলোমিটারে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।  ১২টি স্লুইস গেইটের মধ্যে এখনও পুরোপুরি শেষ করা যায়নি ১০টি রেগুলেটর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।  এগুলো হলো চাক্তাই খালের ওপর একটি, সিটি করপোরেশন খালে একটি, রাজাখালী খালের ওপর একটি, রাজাখালী শাখা-১, রাজাখালী শাখা-৩, শাখা খাল-১, শাখা খাল-২, বলির হাট, ইস্পাহানী এবং নয়া খালের ওপর একটি করে।  এরমধ্যে আগামি মে মাসের মধ্যে চাক্তাইসহ পাঁচটিসহ খালের ওপর নির্মীত স্লুইস গেইটের দরজা বসানোর কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বাস্তবায়নকারী সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ।  তিনি জানান, প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৬৮ শতাংশ।  প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ হলেও কাজের যে গতি, তাতে এ বর্ষা মওসুমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক প্রাণ কেন্দ্র নগরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ বাকলিয়া এবং কালুরঘাট শিল্প এলাকার মানুষের কপালে দুঃখ আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একুশ খালের কি হবে: চট্টগ্রাম নগরে খালের পরিসংখ্যান নিয়ে রয়েছে নানামত।  ইতিহাস বলছে, নগরে ছোট-বড় ১১৮টি খালে এসব খালের দৈর্ঘ্য ১৬৫ কিলোমিটার।  চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রণীত ১৯৬৯ প্রথম ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানে ৭০টি খালের তথ্য উল্লেখ রয়েছে।  আবার একই সংস্থার ১৯৯৫ সালের মাস্টার প্ল্যানে ৩৪ খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।  বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনায় ৫৭টি খালের তথ্য ওঠে এসেছে।  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী খালের সংখ্যা ৫৭টি।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৫৬টি খালের কথা বলা হয়েছে।  সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে চলমান মেগা প্রকল্পেও ৫৭টি খালকে চিহ্নিত করা হয়েছে।  তবে ক্রমাগত দখলের কারণে ৩৬টি খালের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও ২১ খাল উদ্ধারে কোনো গতি নেই।  জলাবদ্ধতার মেগাপ্রকল্প এই ৩৬টি খালকে ঘিরে,যার দৈর্ঘ্য ৯৭ কিলোমিটার।  ৩৬টি খালের মধ্যে ১৪টি বঙ্গোপসাগের, ২৩টি কর্ণফুলীতে এবং তিনটি হালদা নদীতে মিশেছে।  আর নালা রয়েছে এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার।  এর মধ্যে সেনাবাহিনী ৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৬টি খাল এবং ৩০২ কিলোমিটার নালা-নর্দমার উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও পরিস্কারের কাজ করছে।   অর্থাৎ আরও ২১টি খাল এবং এবং ১৩শত কিলোমিটার ড্রেন প্রকল্পের বাইরে রেখে নগরের জলাবদ্ধতা হঁটানোর কর্মযজ্ঞ চলছে!

প্রকল্পের বাইরে রয়েছে বৈরাগ ছড়া খাল, বামাইর খাল,স্লুইস নং-১ (এসএস) সংযোগ খাল, স্লুইস নং-২ (চরপাড়া), স্লুইস নং-৮ হোসেন আহমদ পাড়া), স্লুইস নং-৯ (সিইপিজেড), স্লুইস নং-১০ (সিইপিজেড), স্লুইস নং-১০ (আনন্দ বাজার), স্লুইস নং-১১ (উত্তর হালিশহর), স্লুইস নং-১১ (কাট্টলী), স্লুইস নং-১২ (উত্তর কাট্টলী), স্লুইস নং-১২ (ডিএস সংযোগ খাল,-উত্তর কাট্টলী), স্লুইস নং-১৩ (লতিফপুর), স্লুইস নং-১৪ (সলিমপুর), স্লুইস নং-১৫ (সলিমপুর), স্লুইস নং-১৬(বাংলাবাজার), বৈরাগ্য ছড়া খাল এবং বামাইর খাল, বালুখালী খাল, কৃষ্ণা খাল, কুয়াইশ খাল, ফরেস্ট খাল।  এসব খালের মধ্যে ১৬টি বঙ্গোপসাগরে আর পাঁচটি খাল কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে প্রবাহিত হয়েছে।  নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বুক ছিড়ে যাওয়া এই ২১ খাল উদ্ধার করে খনন, সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ না করলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সুফল পাওয়া যাবে না মনে করছেন নগরবিদরা।  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২১টি খাল উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রথমে অগ্রাধিকার দিতে হবে যেসব খাল বেদখলে গেছে সেগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।  বাস্তবায়নকারী সংস্থা কি সে কাজ করছে নাকি কাজ এবং অর্থের মানদণ্ডে প্রকল্পের অগ্রগতির কথা বলছে সেটি একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়।  খাল, নালা-নর্দমা খনন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে দুই তিন বছর পর খাল এবং ড্রেনগুলো পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি হারাবে।  শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কর্ণফুলীর নিয়মিত ড্রেজিং করা না হলে তলদেশে পলি জমে নাব্যতা হারাবে।  যার প্রভাব পড়বে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে।নগরবাসীকে পোহাতে হবে দুর্ভোগ।  শহরের খাল, নদী ও নালা পরিস্কার রাখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।  এর জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।  পাশাপাশি খাল-নালায় ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৯৫ এর মাস্টার প্ল্যানে অনন্যা আবাসিক এলাকাসহ নিম্নাঞ্চলগুলো বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।  সিডিএ এসব নিম্নাঞ্চলগুলোতে আবাসন প্রকল্প হিসেবে গড়ে তুলে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা সংকুচিত করছে।  যার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।  এর জন্য সিডিএ কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না।  সরকারি সংস্থাগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ না করলে এবং যারা যে কাজ সেটি নিশ্চিত করতে না পারলে জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী সুফল পাওয়া যাবে না।