রাজধানীতে আবার বেড়েছে কিশোর গ্যাং-এর দৌরাত্ম্য। মাঝে উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেলেও সম্প্রতি আবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজধানী থেকে তারা এখন জেলা, উপজেলা এমনকি কোনো কোনো গ্রামেও উৎপাত শুরু করেছে। উঠতি বয়সী এসব তরুণরা দলবদ্ধ হয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো না কোনো বড় ভাইর অধীনে তারা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। এলাকা নিয়ন্ত্রণের নামে তারা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল বা দখলে সহায়তা, উচ্ছেদ ও জবরদখলসহ সব ধরনের অপরাধেই জড়িত।
এছাড়া এলাকার সব ব্যবসা-বাণিজ্য তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে। ফুটপাত থেকে চাদাবাজি, দোকান থেকে মাসিক বা সাপ্তাহিক চাদা উঠানো- কোনো কাজেই তারা পিছিয়ে নেই। এছাড়া যৌন হয়রানি, কারণে অকারণে যাকে তাকে মারধর করা-এসবই তাদের রুটিন কাজ। ইন্টারনেট, কেবল টিভি, ময়লা ব্যবসাও তারা নিয়ন্ত্রণ করে। এলাকার রিকশা গ্যারেজ থেকে চাদা আদায় অথবা ফুটপাতের সবজিওয়ালা থেকে চাদা আদায় কোনো কিছুতেই তারা পিছিয়ে নেই।
এসব তরুণ গুণ্ডা দলের বিভিন্ন নাম আছে। সাধারণত বড় ভাইয়ের নামেই এসব কিশোর গুন্ডা বাহিনীগুলো পরিচিতি পায়। নাবিল বাহিনী, গাংচিল বাহিনী, ভাস্কর বাহিনী, কবজি কাটা গ্রুপ, বিরিয়ানি সুমন গ্রুপ, শুটার আনোয়ার গ্রুপ, লও ঠেলা, দে ধাক্কা ও লাড়া দে বাহিনীসহ আরও নানা নামে এরা এলাকায় পরিচিত। এরা এলাকায় মাস্তানি-সন্ত্রাসি করে বেড়ায়। প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই এসব গুন্ডারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়, আশ্রয়ে- প্রশ্রয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী করে বেড়ায়।
সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত পুলিশের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ২১ জন কাউন্সিল এসব কিশোরা গ্যাং-দের প্রশ্রয় দেয়। ২০২২ সালে তৈরি ওই প্রতিবেদন বলছে, সারা দেশে অন্তত ১৭৩টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৬৬টি ও চট্টগ্রামে ৫৭টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় আছে। ঢাকার অন্যান্য জেলায় রয়েছে ২৪টি গ্যাং (দৈনিক প্রথম আলো)। বাকিগুলো অন্যান্য জেলায়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও এসব কিশোর গ্যাংরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অপরাধ করলে ক্ষেত্র বিশেষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু তাদের কথিত বড় ভাইয়ের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এরা শেষমেষ বের হয়ে আসে। পুলিশ বলছে, বিভিন্ন অপরাধে এদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৭৮০টি মামলা হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, ঢাকাতেই এসব কিশোর গ্যাং বেশি। কিন্তু ঢাকার বাইরেও এদের উপস্থিতি ও দৌরাত্ম যে বেড়ে গেছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। বিভিন্ন সময়ে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে যায়। এমন খবর প্রায়শই গণমাধ্যমে আসে। তবে, গত নির্বাচনের পরে যেন এদের দৌরাত্ম্য আরো বেড়েছে। বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এটাই মনে হয়।
এসব কিশোর গ্যাং-এ ১০ থেকে ৫০ জন সদস্য থাকে যাদের বয়স ১০/১২ থেকে শুরু করে ৩০ বছর পর্যন্তও হতে পারে।
অপেক্ষাকৃত ছোটোরা দলের প্রাথমিক সদস্য। বয়স বাড়লে দলের বড় দায়িত্ব পায়। ডিএমপি সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে রাজধানীতে যতো খুন হয়েছে তার ২৫টিতে কিশোর গ্যাং-এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সংখ্যাটা যথেষ্ট বড়। একটি দেশের রাজধানীতে যতো খুন হয় তার ২৫টিতে যদি কিশোর গ্যাং জড়িত থাকে তবে বুঝতে হবে এরা রাজধানীর মূল অপরাধ জগতের বড় অংশীদার। এদেরকে যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে আগামী দিনে দেশের পুরো অপরাধ জগৎ এরাই নিয়ন্ত্রণ করবে। একটি দেশের কিশোররা যদি এভাবে বেড়ে ওঠে তবে দেশের নাগরিক হিসেবে সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ কী আর দেশের ভবিষ্যতই বা কী?