বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে ডিসেম্বরে ভোট

আওয়ামী লীগের নতুন ভাবনা

হঠাৎ করে ডিসেম্বরে দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার উচ্চারণ করে আসছেন, জানুয়ারি ২০২৪-এ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।  তাহলে ওবায়দুল কাদের কি কারণে কোন শক্তির জোরে কিংবা কার ইশারায় এ ঘোষণা দিয়েছেন।  এটা বিএনপির আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে কৌশলি ভূমিকা নাকি বিএনপি ও তাদের মিত্রদের  অপ্রস্তুুত রেখে নির্বাচনের পথে হাঁটতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।  এ সব নানা প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে।  তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান দেশ বর্তমানকে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশই তো নেই।  নির্বাচন হতে হলে সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  ১০ দফার আলোকে সমস্যার সমাধান করতে হবে।  তিনি বলেন,নির্বাচনের কথা বলে  মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।  তারা মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখতে চাচ্ছে। দেশের মানুষ আজকে জেগেছে।  তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া কোনো নির্বাচন মানবে না।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর।  ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এ ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর।

সাংবিধানিক বিধিবিধানের নিরিখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আগামী বছর জানুয়ারিতেই হওয়ার কথা; কারণ বর্তমান সরকার ও একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে সে মাসেই।  কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।  কারণ, এমন আভাস পাচ্ছেন তিনি।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।  সভাপতি হিসেবে সে সভায় যোগ দিয়ে নিজের অনুমানের কথা জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা নির্বাচন সামনে। আমাদের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলছে।  নির্বাচন কমিশনের আভাস অনুযায়ী হয়ত ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা।

এ সময় নির্বাচনকালীন গুজব নিয়েও কথা বলেন তিনি।  আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন, জাতীয় নির্বাচন এলেই দেখা যায় একটা শঙ্কা।  নানা ধরনের গুজব ডালপালা বিস্তার করে।  আজকে আমরা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের দিকে অভিযাত্রা শুরু করেছি।

বিএনপির সাথে আমাদের অতীতের যে অভিজ্ঞতা আছে, তা সুখকর নয়।  ২০১৩/১৪ সালে রাজনীতিতে তারা কত নিষ্কৃষ্টতম-নোংরা ভূমিকা পালন করেছে, সেটার প্রমাণ দেশের মানুষ পেয়েছে।  নতুন করে দেওয়ার কিছু নাই।  আমাদের স্মৃতিটা এখনও জাগে, দেশের জনগণ এতো তাড়াতাড়ি সেই স্মৃতি ভুলবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিএনপিকে প্রথম থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখি।  তাদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক চেয়েছি।  তাদের জন্ম থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, একুশে আগস্টের ঘটনা, ২০০১ সাল, সব কিছুতেই তারা আমাদেরকে বরাবরই মনে করে আসছে শত্রুপক্ষ। শত্রুপক্ষ হিসেবে তারা আমাদের সঙ্গে শত্রু তাই করে গেছে। এই শত্রু তার অপরিহার্য অনুষঙ্গ ষড়যন্ত্র।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) গত এক বছর ধরে মাঠে এসেছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর। তারা আন্দোলন করবে, গণঅভ্যুত্থান করবে, ১১ ডিসেম্বর থেকে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে দেশ চলবে, তারেক রহমান গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেবে। এসব বড় বড় কথা তারা বলেছে, কিন্তু দেশবাসী লক্ষ্য করেছে, আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায়, বিশেষ করে পুরনো তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে, তাদের আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কায় শান্তির সমাবেশ করেছি।  যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে আমরা শান্তি সমাবেশ করব।

এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন করে মাঠে নামে বিএনপি।  এর আগে সকল বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে।  তাতে দলীয় নেতাকর্মীদের বেশ উৎসাহজনক উপস্থিতি বিএনপি নেতৃত্বকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে।  এর থেকে ঢাকায় বিএনপি তাদের পুরানো  নতুন  রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে যুগপৎ সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিয়ে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে নামে।  ইতোমধ্যে কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি মোটামুটি দেশে বিদেশে একটা অবস্থানও তৈরি করেছে।  তারা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছাতে সব দলকে এক জায়গায় নিয়ে আসারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  যারা আদর্শগত-চেতনাগত মতবিরোধে দূরত্বে অবস্থান করছেন তারাও এখন বিএনপির সুরে এবং ১০ দফার পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছে।  ধারনা করা হচ্ছে সরকার বিএনপিকে এ আন্দোলন থেকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গত ৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায়ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় এমপিদেরকে এলাকায় গিয়ে ভোট চাইতে নির্দেশ দিয়েছেন।  দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোও জানাচ্ছে, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিকাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।  দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আগামী নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে নানাভাবে কাজ করছে। কয়েক দফা জরিপ কাজও পরিচালনা করেছে সরকারী সাংস্থা ও বেসরকারি দুটো সংস্থার মাধ্যমে।  শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী বিকল্প প্রার্থীর তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।  এ থেকে বোঝা যায়, আগামী নির্বাচনের নানা ছকও আঁকা হচ্ছে গোপনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ লড়াই সংগ্রাম করে করে আজকের অবস্থানে এসেছে।  বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সাথে খেলতে হলে আরো কঠোর সাধনা করতে হবে।  সামনের দিনগুলোতে আরো কি কি হবে বিএনপি শুধু তাকিয়ে দেখবে।  তাদের কিছুই করার থাকবে না।