বাসার অদূরে আড়ং। হেটে গেলে দুই মিনিটের পথ। তবে এযাবৎ কালে নিজের জন্য কিছু কিনতে যাওয়া হয়নি। রাতভর আলো, মাইক আর গাড়ির অবিরাম শব্দ। মধ্য রমজান পার হওয়ার পরে সকাল ১০ টার পর থেকে রাত ৩/৪ টা পর্যন্ত জ্যাম থাকে এখানে, এই জ্যাম কখনো কখনো আমাদের বাসার পার্কিং পর্যন্ত চলে আসে। আমরা অবরুদ্ধ হয়ে থাকি। শনিবার খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে পোস্ট করেন। তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো: বাসার অদূরে আড়ং। হেটে গেলে দুই মিনিটের পথ। তবে এযাবৎ কালে নিজের জন্য কিছু কিনতে যাওয়া হয়নি। আড়ংয়ে না গেলেও এর অস্তিত্ব টের পাই প্রতিনিয়ত। বিশেষত রোজার মাস শুরু হলে। সেহরি পর্যন্ত খোলা থাকে। রাতভর আলো, মাইক আর গাড়ির অবিরাম শব্দ। মধ্য রমজান পার হওয়ার পরে সকাল ১০ টার পর থেকে রাত ৩/৪ টা পর্যন্ত জ্যাম থাকে এখানে, এই জ্যাম কখনো কখনো আমাদের বাসার পার্কিং পর্যন্ত চলে আসে। আমরা অবরুদ্ধ হয়ে থাকি। পয়েন্টে আসি: ঈদ মৌসুমে মাঝেসাঝে দু’একটা পাঞ্জাবি গিফট পাই। তবে আমার মতো বেসাইজের মানুষের জন্য কোনো কিছু কেনা যে কারো জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। পাশে হলে লম্বায় বড়, লম্বায় হলে ড্রেসের মধ্যে আবার ঢুকতে পারি না। আর হাতা তো কোনোভাবেই মাপ মতো হয়না। গিফট হিসেবে পাওয়া এক পাঞ্জাবির সাইজ পরিবর্তন করতে আড়ংয়ে গিয়েছিলাম। ঢুকতে পেরেছিলাম কোনোমতে তবে দাড়ানোর জায়গাও নেই। উচ্চ-মধ্যবিত্তদের মহাসমাবেশ। একসময় গাউছিয়ায় এরকম উপচে পড়া ভীড় দেখেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তনের কারনেই হয়তো একসময় যারা গাউছিয়ায় যেতো এখন তাদের অনেকেই আড়ংয়ে যান। গাউছিয়া আর আড়ংয়ের কাপড়ের মধ্যে গুনগত মানের পার্থক্য সম্পর্কে নিশ্চিত জানিনা। তবে একটা বড় পার্থক্য সম্ভবত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আড়ংয়ে দরদামের ইস্যু নেই। সবচেয়ে বড় পার্থক্য ব্যবহারের।গাউছিয়া/নিউমার্কেটে গিয়ে সসম্মানে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন এরকম মানুষের সাথে আমার এখনো দেখা হয়নি। তবে আড়ংয়ের সুদর্শন সুশ্রী বিক্রয়কর্মীরা কিন্তু স্যার স্যার বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। যদিও শুনেছি পরিশ্রমের তুলনায় আড়ংয়ের এসব কর্মীদের বেতন/অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নাকি খুবই কম। আরও শুনেছি এখানে পন্য সরবরাহকারী সারাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদেরও খুবই স্বল্প মূল্য প্রদান করা হয়। আবারও পয়েন্টে আসি। আমার জন্য এখানেও বড় চ্যালেঞ্জ চেঞ্জ করতে যাওয়া পাঞ্জাবীর দামের সাথে সমন্বয় করে সাইজ মতো পছন্দসই কাপড় খুঁজে পাওয়া। ট্রায়াল না দিয়ে কিছু আনা মানে আবারও অনিশ্চয়তা। ট্রায়াল রুমের সামনে দীর্ঘ লাইন। এই লাইন সহজে ছোট হয়না বরং বাড়তেই থাকে। সহযোগী সহধর্মিণী বিরক্ত হয়ে বলে, “পাঞ্জাবিটা চেঞ্জ করে আর কয়টা টাকা এড করে শাড়ি নিয়ে নাও, সাইজ টাইজের কোনো ব্যাপার নাই।” হুম,সব শাড়ি এক সাইজ। বাংগালীর চিরায়ত একটি বদ অভ্যাস, পেছনে অপেক্ষমাণ লাইন যত দীর্ঘ হয় সামনের মানুষের কাজের গতি ততোটাই কমতে থাকে। অন্যকে বেকায়দায় দেখতে আমাদের ভীষণ ভালো লাগে। এমনকি মসজিদের ওজুখানায়ও এটা দেখেছি। নামাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে, ওজুর জন্য দীর্ঘ লাইন। ওজুরত কোনো কোনো হুজুরকে দেখবেন হাত পা এমনভাবে ঘষা শুরু করেছে মনে হবে এই জনমে আর পানি দেখে নাই, আখেরি অজুটা সেরে নিচ্ছে। আড়ংয়ের ট্রায়াল রুমের সামনেও তাই। কেউ একবার ভিতরে ঢুকলে আর বের হয়না। ভিতরে এতটা সময় কি করে তার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।
যেরকম কখনও কখনও দেড় ঘন্টা জ্যামে বসে থেকে জ্যাম ছোটার পরে সামনের পথ ফাঁকা দেখে কি কারনে আসলে দেড় ঘন্টা একই জায়গায় বসেছিলাম তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনা। সর্বশেষ বিড়ম্বনার নাম মূল্য পরিশোধ। আবারও সুদীর্ঘ লাইন। এই লাইনও যত দীর্ঘ হয় ওনাদের মূল্য গ্রহণের গতিও হ্রাস পায়।