প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি কবে বন্ধ হবে
বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হওয়ার পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থই। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে যে ঘাটতি তৈরি হয়, তার অনেকটাই পূরণ করে থাকেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসী। নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে প্রতিবছরই বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও সেই তুলনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে না। ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসেই ১২ লাখ ১০ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৪০ হাজার। প্রবাসী শ্রমিকের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ হলেও প্রবাসী আয়ে সপ্তম স্থানে। গত বছর তাঁরা দেশে পাঠিয়েছেন ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এসব আনন্দের খবরে যে দুঃসংবাদটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে, সেটি হলো প্রবাসীদের নিরাপত্তাহীনতা। প্রবাসে সব হারিয়ে, পুলিশের হাতে আটক হয়ে, বাধ্য হয়ে, শূন্য হাতে ফিরে আসা শ্রমিকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, এ বছরের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্য হাতে দেশে ফিরে এসেছেন ৮০ হাজার ৮১১ জন প্রবাসী। তাঁদের মধ্যে পুরুষ কর্মী ৭৮ হাজার ৭৯ জন এবং নারী কর্মী ২ হাজার ৭৩২ জন। তবে এর বাইরে যাঁরা পাসপোর্ট নিয়ে ফিরে আসছেন, তাঁদের কোনো হিসাব নেই এ সংস্থার কাছে। অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যর্থ অভিবাসনের প্রকৃত চিত্র আরও নাজুক। প্রবাসী কর্মীর ভূমিকা ও তাঁদের অধিকারকে সম্মানিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে জাতিসংঘ। দেশেও এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রবাসী কর্মীরা উন্নয়নের অংশীদার, সমুন্নত রাখব তাঁদের অধিকার’।
প্রবাসী কর্মীরা যে উন্নয়নের অংশীদার, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁদের অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রথমত, প্রবাসী কর্মীদের বেশির ভাগই যান দালালদের মাধ্যমে। তাঁদেরকে অনেক বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়। প্রবাসী কর্মীরা দালালদেরই বেশি টাকা দিচ্ছেন, তা নয়, ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার কারণে গন্তব্য দেশটিতে তাঁরা নানা রকম হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। যে চাকরির কথা বলে তাঁদের বিদেশে নেওয়া হয়, সেই চাকরি দেওয়া হয় না।
হয়রানি ও প্রতারিত হওয়া থেকে প্রবাসী কর্মীদের রক্ষা করতে হলে প্রতিটি নিয়োগ ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্ত্বেও তাঁরা যাতে বিদেশে হয়রানির শিকার না হন, গন্তব্য দেশটিকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে নিবিড়ভাবে তদারক করতে হবে।
নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও যদি কোনো প্রবাসী কর্মী শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন, তাহলে দেশে তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। আর বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারলে তাঁরা যাতে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। তবে সবকিছুর ওপরে প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।