দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আচরণবিধি মানছেন না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা। বেশির ভাগ এলাকায় প্রার্থী এবং সমর্থকরা জেনে-বুঝেও নির্বাচনবিধি অমান্য করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
গত শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম জেলার এমন নয়টি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন তার ভাষায় বলেন, যেসব প্রার্থী সমাবেশ বা জনসভা করছেন তার পূর্বানুমতি নেওয়ার কথা রয়েছে। আচরণবিধি অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টা আগে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তা জানানোর কথা। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং পুলিশ সুপার ও থানাকে অবহিত করবেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে কী সাজা সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন।
এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১৪টিতে আওয়ামী লীগের এবং অপর দুটিতে জাতীয় পার্টি মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এসব আসনে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ভোটে নানা সমীকরণ তৈরি হয়েছে। পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, সন্দ্বীপ, মীরসরাই নির্বাচনি এলাকায় নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের সঙ্গে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
একটি জাতীয় দৈনিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে সারাদেশে নির্বাচনী আচরণবিধি বেশি লঙ্ঘন করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মন্ত্রী-এমপিরা। নির্বাচন কমিশনের গঠন করা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিগুলো এখন পর্যন্ত ২১১টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ বা চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ৯২ জন। আবার তাদের মধ্যে ৫২ জনই বর্তমান সংসদ সদস্য। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জেল-জরিমানার পাশাপাশি প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য এখন মাঠে আছেন প্রায় ৮০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া ‘ভোটপূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত’ করার জন্য জুডিসিয়াল (বিচারিক) ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে প্রতিটি আসনে একটি করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি রয়েছে। তারাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। তবে তারা নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে। কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দলকে ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে অথবা প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে।
আমরা আশা পোষণ করি যাঁরা নির্বাচন করছেন তাঁরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। তাঁরা যেন মনে রাখেন নির্বাচিত হলে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হবেন যেটাকে আমরা আইনসভার সভ্য বলতে পারি। তাঁরা নিজেরা আইন প্রণয়ন করবেন আর সে আইনে চলবে বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ। ফলে আইন অমান্য করা তাঁদের পক্ষে কোনোভাবেই সমীচীন নয়।