নাশকতাকারী ও ভাড়াতে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করুন

৭ জানুয়ারির আগেই

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের বাকি মাত্র দুই দিন। এরই মধ্যে নানান শঙ্কার কথা জানিয়েছেন পুলিশ ও র‌্যাব। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রার্থীর অনুসারীরা সহিংসতার জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়োগের চেষ্টা করছেন। কমান্ডার মঈন বলেন, সম্প্রতি দেশব্যাপী বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আমরা দেখেছি বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রে প্রার্থীদের অতিউৎসাহী সমর্থকদের কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছেন। ৭২ ঘণ্টায় জনপ্রতিনিধিসহ ৫০ জনকে সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের নামে সহিংসতার মামলা হয়েছে। পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা এ তথ্য র‌্যাবকে দিয়েছেন।

অন্যদিকে, নির্বাচন নিয়ে নাশকতাকারীদের তথ্য দিলে ২০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। গত মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। যদিও আইজিপি ‘নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো নাশকতার শঙ্কা নেই। তবে নাশকতার বিষয়টি বিবেচনা করে, পুলিশ নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নিয়েছে’ বলে জানান।

এর আগে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, নাশকতাকারীরা স্থান কাল পাত্র ভেদে কিছু চোরাগোপ্তা হামলা করছে। এসব হামলা প্রতিরোধে র‌্যাব সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মবেশে অবস্থান করছে, গণপরিবহনে যাত্রীবেশে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সফলতা রয়েছে, আমরা বেশ কয়েকজনকে নাশকতার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। ছদ্মবেশে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান, সাদা পোশাকে ও যাত্রীবেশে গণপরিবহনে অবস্থানের র‌্যাবের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।

প্রশাসনের এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রশংসনীয়। কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসন বদ্ধপরিকর। তবে এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনীতিবিদসহ সমাজের নানা প্রতিনিধিত্বশীল মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নাশকতা মোকাবিলা করতে হবে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা হতে পারে– এমন ইস্যুতে অপপ্রচার বন্ধ এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে আরও কঠোর হতে হবে। বাসে আগুন দেওয়া দুর্বৃত্ত ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া নাশকতা প্রতিরোধে এমন কিছু কিছু পদ্ধতি চালু করতে হবে- যাতে সন্ত্রাসীদের ধরতে সুবিধা হবে।

যদিও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা পৃথিবীর কোথাও নেই। চোরাগোপ্তা কিংবা ছদ্মবেশে হামলা মোকাবেলা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। যারা এ ধরনের চোরাগোপ্তা নাশকতা করছে, তারাও কিন্তু তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে। এসব মাথায় রাখতে হবে। এখন যারা যাত্রী বেশে চোরাগোপ্তা হামলা কিংবা নাশকতা করছে সেটি শতভাগ নির্মূল করা চ্যালেঞ্জিং। তবু চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বাসে যাত্রীবেশে নাশকতাকারীদের আগমনকে রোধ করতেই হবে। যত নির্মম নিষ্ঠুর হোক না কেন, আইন প্রয়োগ করতে হবে কঠোর হাতে। নাশকতাকারীরা যদি তাদের অপতৎপরতা বন্ধ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। মোট কথা, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দস্কৃতকারীরা যাতে এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আগুন ও বোমা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৭ জানুয়ারির আগেই নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনে নাশকতা করতে কিংবা নির্বাচনকে বানচাল করতে একটি গোষ্ঠী ষড়ষন্ত্র করতে পারে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।