নতুন সরকারের কাছে নাগরিকের প্রত্যাশা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর এর মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সবমিলিয়ে তিনি পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১১ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হলো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ৩৭ জন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। তাঁরাও সবাই শপথ নিয়েছেন। প্রথমে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর মন্ত্রী এবং তারপর প্রতিমন্ত্রীরা শপথ নেন। টানা চতুর্থবারসহ মোট পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া সারা বিশ্বেই একটি রেকর্ড। আর কোনো দেশে গণতান্ত্রিক উপায়ে এত দীর্ঘ সময় সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো নজির নেই।

শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৪ সালে তৃতীয়বার এবং ২০১৯ সালে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালে পঞ্চমবারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন।

একই দল ও নেতা নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হলেও এ সরকারকে কিছু কাজ অবশ্যই করতে হবে। বিগত কয়েকবছর ধরে দ্রব্যমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত প্রায়। এর পেছনে সক্রিয় সিন্ডিকেট দমন করতে না পারাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখে মানুষ। কাজেই নতুন সরকার দ্রব্যমূল্য কমাবে এই প্রত্যাশা করে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। তাদের মতে, এই সরকার চাইলে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে পারে। যদিও নতুন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, নতুন সরকারের যাত্রার শুরুতে দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙা এবং নিয়ন্ত্রণ বিশেষ গুরুত্বে থাকবে। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সময়কালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার খুব সাফল্যের সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল। এমনকি ২০১৩ ও ১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের সময়েও বাজারে দ্রব্য সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিল সরকার।

দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলার সংকটসহ আর্থিক খাতের সংস্কারে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকখাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে। হুন্ডি বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাদের বিচার করতে হবে। মোট কথা আগামীতে সরকারকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বেশি জোর দিতে হবে। এছাড়া, রাজনীতি বিশ্লেষকদের মত, টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার জারি রাখতে হবে। মানবিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সমাজে শুভবোধের উদ্ভব ঘটাতে সংস্কৃতিচর্চার ওপর জোর দিতে হবে। অর্থাৎ দেশকে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে রূপান্তরের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।