টিকটকের ফাঁদে ফেলে অপহরণ

ফটিকছড়ির  কিশোরী পতেঙ্গায় উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩

রুয়েল আহমেদ। বয়স ২১। গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের পাইক পাড়ায়। তার আছে আরও দুই বন্ধু।  এর মধ্যে একজন অনিক, অন্যজন ইমন।  এ দু’জনের বয়স ১৮ থেকে ২০।  ইমনের গ্রামের বাড়ি সিলেটে, অনিকের বাড়ি নেত্রকোনায়।  পড়ালেখায় তারা কেউ প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোয়নি।  কেউ করেন গার্মেন্টসে চাকরি, কেউ পেশায় রাজমিস্ত্রী।  বর্তমানে তিনজনই বসবাস করে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানাধীন পূর্ব কাটগড় এলাকায়।  রুয়েল কিছুদিন এক গার্মেন্টসে চাকরি করে তো কিছুদিন অন্যটিতে।  সারাদিন মজে থাকে ‘টিকটক’ বানানোর নেশায়।

৮ মাস আগে নিজের একটি টিকটক ভিডিও’র মাধ্যমে পরিচয় হয় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভুজপুর থানা এলাকার ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া এক কিশোরীর সাথে।  সেই সুবাদে মুঠোফোন নম্বর নিয়ে কিশোরীকে উত্যক্ত করতে থাকে রুয়েল ।  একপর্যায়ে ওই কিশোরীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে সে।  রাজি না হলে ‘ভয়ংকর’ পরিকল্পনা করে বসে রুয়েল।

দুই বন্ধু অনিক ও ইমনকে নিয়ে কিশোরীকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে রুয়েল।  পরিকল্পনা মতে, গত ৪ জানুয়ারি স্কুলে যাওয়ার পথে কিশোরীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে চট্টগ্রাম শহরে পূর্ব কাটগড় এলাকায় বন্ধু অনিকের বাসায় আটকে রাখা হয়।  তবে শেষ রক্ষা হয়নি। তিনজনই ধরা পড়েছে র‍্যাবের জালে।  রবিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৭।  পাশাপাশি তাদের জিম্মিদশা থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষক এবং আইনজীবী এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, দেশে ‘টিকটক’ ঝোঁকে পড়ে উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরী অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।  টিকটকের আড়ালে বাড়ছে অপরাধও। দেশে কিশোর, তরুণ-তরুণীদের কাছে জনপ্রিয় টিকটক অ্যাপ।  ছোট ছোট করে নানা রকম ভিডিও প্রচার করা হয় এই অ্যাপে।  কিন্তু এই টিকটকের আড়ালে ঘটছে সর্বনাশ।

র‍্যাব-৭ কর্মকর্তা (মিডিয়া) নূরুল আবছার বলেন, এই টিকটকের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেক কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণী।  ‘স্টার’ বানিয়ে দেয়া কিংবা  বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে নেওয়া, পাচার করে দেওয়া, অপহরণ করে ধর্ষণের ঘটনা কিংবা আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল, এমনকি নৃশংস হত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।  বিশেষ করে মেয়েদের বেলায়। ‘শর্টকাট’ পথে তারকা হওয়ার ইচ্ছা বা তারকা জগতের হাতছানিতে কিশোর-কিশোরীরা জড়িয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ অপরাধীদের জালে।  এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।’

ভিকটিমের বাবা দেশ বর্তমানকে বলেন, ‘র‍্যাব-৭ এর প্রচেষ্টায় আমার মেয়ে উদ্ধার হয়েছে৷  আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।  আমার মেয়ে কোমলমতি।  টিকটকের আড়ালে বখাটে রুয়েল তাকে ফাঁদে ফেলতে না পেরে দুই সহযোগী ইমন ও অনিককে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে হোঁয়াকো এলাকা থেকে জোরপূর্বক আমার মেয়েকে অপহরণ করে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গ পূর্ব কাঠগড় এলাকায় জিম্মি করে রাখে। উঠতি বয়সের সন্তানদের হাতে মুঠোফোন তুলে দেওয়ার আগে অভিভাবকদের ভেবে দেখা উচিত।’

জানা গেছে, ঘটনার দিন (৪ জানুয়ারি) স্কুল থেকে সময়মতো বাড়ি ফিরে না আসায় আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কিশোরী মেয়েকে না পেয়ে বাবা ভুজপুর থানাধীন দাঁতমারা পুলিশ কেন্দ্রে জিডি করেন।  জিডির সূত্র ধরে ভিকটিমকে উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করে র‍্যাব-৭।

প্রযুক্তির সহায়তায় পতেঙ্গা পূর্ব কাটগড় এলাকায় বন্ধু অনিকের বাসা থেকে রবিবার (৮ জানুয়ারি) ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে। কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে রুয়েলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত তিনজনই কিশোরীকে অপহরণের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ভুজপুর থানায় মামলা হয়েছে।