ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুরু

টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি, রেল, নৌ ও সড়কপথে বাড়তি নিরাপত্তা

বিদায় নিচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান।  শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শনি কিংবা রোববার ঈদ।  ঈদ সামনে রেখে ইতোমধ্যে ঘরে ঘরে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।  আজ বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি।  আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের সুবিধার্থে ঈদের আগে কিছু সরকারি অফিস এবং ব্যাংক-বীমার নির্দিষ্ট কিছু শাখা সীমিত পরিসরে খোলা থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার থেকে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে।  ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে নগরের বিভিন্ন স্পটে রযেছে পুলিশের বাড়তি সতর্কতা।  টিকেটের বাড়তি দাম ঠেকাতে রয়েছে প্রশাসনের নজরদারি।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল)  ছিলো ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। আজ বুধবার (১৯ এপ্রিল)  শবে কদর উপলক্ষে সরকারি বন্ধ।  আগামীকাল বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে ছুটি।  পরের দিন শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ঈদের আনুষ্ঠানিক ছুটি।  সবমিলে আজ থেকে টানা পাঁচ দিন ছুটির ফাঁদে দেশ।  তবে রোববার ঈদ হলে সরকারি ছুটি বাড়তে বাড়তে পারে আরও একদিন।

টানা ছুটি থাকলেও গরমে স্বস্তিতে নেই ঘরমুখো মানুষ। প্রচন্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা।  কেউ ছুটছেন নৌপথে, কেউ রেলপথে, কেউ সড়কপথে।  আবার কেউবা ছুটছেন আকাশপথে।  যেতে তো হবেই। কারণ আর কয়দিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ-উল-ফিতর।

ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে গতকাল বিকেল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে।  আর কোনো কর্মদিন না থাকায় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ গতকাল বিকাল থেকে মূলত গন্তব্যে ছুটতে শুরু করেছে।  তবে বেশির ভাগ মানুষ পরিবার-পরিজন দিয়ে বাড়ি ফিরবে আজ ও কাল।  ঈদযাত্রায় বাড়তি চাপের বিষয় মাথায় রেখে রেল কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ, বিআরটিসি, বেসরকারি মালিকানাধীন বাস সার্ভিসগুলো বাড়িয়ে দিয়েছে বাড়তি সেবা।  চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়সূচিতে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন ছাড়াও চলছে বিশেষ ট্রেন।  সোমবার থেকে ঈদের টিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছে, চলবে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত।  রেল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রেলরুটে ঈদ উপলক্ষে ১৮টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।  তবে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ১০টি আন্তঃনগর ও ৪টি মেইল চললেও সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে বলে জানা গেছে।  এসব ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটছে।গতকালও ট্রেন স্টেশনে লক্ষ্য করা গেছে ভিড়।  তবে টিকিট কিনতে কোনো ঝামেলা নেই।  ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ঠ যাত্রীরা।

বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাট থেকে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে নিয়মিত লঞ্চ সার্ভিসের পাশাপাশি সপ্তাহে আরও বাড়তি দুদিন সার্ভিস দিয়েছে।  সড়কপথে যাত্রীর সামলাতে নগরের স্টেশন রোড, এ কে খান মোড়, অলংকার মোড়, গরীবুল্লাহ শাহ মাজার, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, কর্ণফুলী ব্রীজ, কদমতলী বাস স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন জেলার এবং জেলার অভ্যন্তরীন যাত্রীদের বাড়তি সার্ভিস দিয়েছে বেসরকারি পরিবহন মালিকগুলো।  চট্টগ্রাম নগর থেকে উত্তর ও দক্ষিণমুখী সবকটি সড়কপথে বেড়েছে গাড়ির চাপ।  শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে আকাশপথে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে আগেভাগে টিকেট বুকিং দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো।

ঈদে চট্টগ্রাম ফাঁকা হয়ে গেলেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে রেখে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানানো হয়েছে।  এছাড়া, রেল স্টেশন, লঞ্চ স্টেশন, বিভিন্ন বাস স্টেশনসহ প্রবেশমুখে রয়েছে পুলিশের বাড়তি সতর্কতা।  এছাড়া নগরজুড়ে টহল জোরদার করবে এলিট ফোর্স-র‌্যাব।  নৌপথে যাত্রীসেবা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে নৌ পুলিশও নিয়েছে বাড়তি সতর্কতা।  নগরের বিভিন্ন বাস স্টেশনে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে।

দুই দিন আগেও ছিলো দাবদাহ।  সোমবার থেকে আহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।  আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৩ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ইশ^রদীতে ৪৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন  রাজশাহীর বাদলগাছিতে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  তাপমাত্রা আরও কমবে, হতে পারে বৃষ্টি।