আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের জন্য তাঁর দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে।”
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন আগে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তাঁর দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। ইশতেহারে, আওয়ামী লীগ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন নিশ্চিত করার এবং অবকাঠামো উন্নয়ন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার চর্চার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জোরদার করা হবে। এটি অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার, রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ ও দুর্নীতি নির্মূল করার, একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং স্বাস্থ্য বীমা চালু করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। তিনি বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবরোধ–পাল্টা অবরোধের ফলে গোটা বিশ্বের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা হয়েছে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয় ও আমদানি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। দেশিয় মুদ্রার মানের ব্যাপক অবনতিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্য এবং মানুষের জীবনযাপনের ওপর। বহুমুখী ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, এ সমস্যা ধনী–গরিব সকল দেশের। তবে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা সমপ্রসারণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন–মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবের। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এ জন্য আমরা ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’ এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দেই। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছি। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা–দারিদ্র্যমুক্ত ‘স্মার্ট সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
আসলে ‘উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দেশে নতুন শিল্প বিপ্লব ঘটাতে হবে। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। এ জন্য দেশে কৃষির পাশাপাশি শিল্প খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দেশের শিল্পখাতের আরও উন্নয়ন ঘটাতে হলে অধিক পরিমাণে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। দেশে অনেক কর্মক্ষম যুবক ও তরুণ রয়েছে। তাদেরকে খুঁজে বের করে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা নিজেরাই নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
তৈরি পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্সে ভর করে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০২৬ সালে এলডিসিভুক্ত দেশের তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে আসবে এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির তালিকায় নাম লেখাবে। বাংলাদেশের স্বপ্ন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া। উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে আমাদের শিল্প খাতে বৈচিত্র্য সময়ের দাবি। কিন্তু সামপ্রতিক বছরগুলোয় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো চালু হলেও নতুন শিল্প খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি সেগুলো বাংলাদেশেই উৎপাদন করতে হবে। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এ বিষয়ে বিসিককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।