করতোয়া নদীতে নিখোঁজ কলেজ ছাত্রের লাশ ৩ দিন পর ভেসে উঠলো

আমিনুল হক (বাবু)শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বালুবাহী বল্কহেডে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হওয়ার পর করতোয়া নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ মারুফ হোসেন নামের এক কলেজ ছাত্রের লাশ ৩ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে লাশটি ভাসতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়।

মারুফ হোসেন (১৮) উপজেলা সদরের দ্বারিয়াপুর বাজার পাড়ার কাপড়ের আড়ত ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদের একমাত্র ছেলে এবং শাহজাদপুর সরকারী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মারুফের স্বজন সহ স্থানীয় শতশত মানুষ মোহাম্মদপুর করতোয়া নদীর তীরে ভিড় জমায়।

পরে সিরাজগঞ্জ নৌ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মারুফের লাশ উদ্ধার করে করে।

প্রত্যদর্শী শামসাদ ও শ্যালো নৌকার মাঝি নুরুজ্জামান জানান, শনিবার দুপুর ২টার দিকে এম, বি ফাতেমা জাহান নামক বল্কহেডটি বালু আনলোড করে ফিরে যাবার সময় করতোয়া নদীর মোহাম্মদপুর পোলঘাট এলাকায় পৌছলে ওপরে থাকা বিদ্যুৎতের তাঁরে লেগে যায়। এসময় বল্কহেডের উপরে থাকা চালক রেদওয়ান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার শরীরে আগুন ধরে যায় এবং পাশে থাকা কলেজছাত্র মারুফ নদীতে পড়ে যায়।

একই সময় চালক রেদওয়ান আহত হয়ে বল্কহেডের ওপরে পড়ে ছিল এবং বল্কহেডটি নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে নদীতে ঘুরপাক খাচ্ছিল। পরে বাল্কহেডের অন্যান্য সদস্যরা বাল্কহেডটি বাতিয়া ঘাটে নিয়ে যায় এবং আহত চালককে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হয়ে পানিতে পড়েও সে বাচাঁর জন্য আকুতি জানিয়ে হাত উপরে ওঠিয়ে সাহায্য চায়, স্থানীয়রা এই দৃশ্য দেখে নদীর তীর থেকে নৌকা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মারুফ পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় তারা মারুফকে পানিতে খোঁজাখুঁজি করলেও তাকে পাওয়া যায়না, কিছুক্ষণ পর তার পরিহিত জুতা ভেসে ওঠে।

পরদিন রবিবার শাহজাদপুর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার খোরশেদ আলমের  নেতৃত্বে করতোয়া নদীতে নিখোঁজ মারুফ হোসেনকে উদ্ধারে রাজশাহী থেকে আসা ডুবুরী দলের সহযোগিতায় রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নদীতে অভিযান চালানো হলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

শাহজাদপুর থানার ওসি সবুজ রানা জানান, বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হওয়ার পর বল্কহেডের আহত চালককে শ্রমিকরা ঢাকায় নিয়ে গেছে। কিন্তু বল্কহেড থেকে মারুফ নদীতে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার কথা তারা স্বীকার করেনি। তবে পরিবারের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছিলাম। আজ সোমবার দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই মারুফের লাশ ভেসে ওঠে।

তিনি আরো জানান, বল্কহেডটির মালিক মোক্তার হোসেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বাসিন্দা। তার সাথেও যোগাযোগ হয়েছে। বাতিয়া এলাকায় থাকা বল্কহেডটি জব্দ করার জন্য নৌ-পুলিশকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, একই দিন একই গ্রামের মারুফ সহ মোট ৩ জন কলেজ ছাত্র নদীতে পড়ে নিহত হয়। অপর ২ জন একই গ্রামের তৌহিদের ছেলে তন্ময় ও শাহ আলমের ছেলে সজল। নিহত ৩ জনই শাহজাদপুর সরকারি কলেজের ছাত্র।