সমালোচনা করে ওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোনো দেশে এমন চাইল্ড এক্সপ্লোটেশন হলে সেই গণমাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করা হতো। সরকার এখনো তা করেনি। শেখ হাসিনা অনেক ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন।
তিনি বলেছেন, শিশুর হাতে ১০ টাকা উৎকোচ দিয়ে এ ধরনের কথা (পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো) বলিয়ে পরে বলা হলো সেটি ‘ভুল’। উন্নত বিশ্বের গণতান্ত্রিক কোনো দেশে এমন চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন হলে সেই মিডিয়া বা গণমাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করা হতো।
রোববার (২ এপ্রিল) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, কেউ কেউ বলেন, ভুল তো অপরাধ নয়। ঠিক আছে, ভুল অপরাধ নয়। কিন্তু অপরাধকে নিছক ভুল বলে কি এড়িয়ে যাওয়া যায়। এটা জঘন্যতম অপরাধ। এটা চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন। তিনি বলেন, এই ভুলের জন্য কি কেউ ক্ষমা চেয়েছে। অথচ ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ‘তারাই ঠিক’ সেই অহংকারে বুদ হয়ে নিজেদের বক্তব্যকে সমর্থন করে যাচ্ছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) বিবৃতি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে, সাংবাদিককে ভয় দেখাতে সরকার এই কাজ করেছে, একটি পত্রিকার রিপোর্টারকে গ্রেফতার করেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলা সরকার করেনি, মামলা বেসরকারিভাবে হয়েছে। কিন্তু অপরাধের কি কোনো শাস্তি নেই?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফখরুল সাহেবরা সাংবাদিকদের স্বাধীনতার জন্য মায়া কান্না করেন। এদেশের অসংখ্য সাংবাদিক হত্যার হোতা হচ্ছে তারা (বিএনপি)। সংবাদপত্রের নবম ওয়েজ বোর্ড, কল্যাণ ট্রাস্টসহ যা কিছু করেছেন, সবকিছুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন।
দৈনিক প্রথম আলো স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে দেশকে বিশ্বের সামনে কটাক্ষ করেছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা অনেক কিছু সহ্য করি। বলা হয় সাংবাদিকের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, গণ্যমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। অসংখ্য সাংবাদিককে যারা হত্যা করেছে, তারা আজ কী করছে?
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের অবাঞ্ছিত সত্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের রাজনীতি অন্যান্য দেশের রাজনীতির মতো নয়। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী আপসে আসতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে টেলিফোন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো যখন মারা যায়, তখন সময় নিয়ে পুত্রহারা মাকে সান্তনা দিতে প্রধানমন্ত্রী গেলেও সেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। তোমরা যাকে মারতে চেয়েছ, সেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শোক প্রকাশ করতে তোমাদের কাছে গিয়েছে। এটাই বঙ্গবন্ধু কন্যার উদারতা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা আন্দোলন করে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে পারে নাই। শেখ হাসিনার উদারতার কারণে বেগম জিয়া আজ নিজের বাড়িতে আছেন। তার সাজা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে রেখেছেন। তারা প্রতিনিয়ত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের সঙ্গে অনলাইনে মিটিং করে যাচ্ছেন। এটাও বাংলাদেশে হচ্ছে, এরপরও তারা বলছেন বাংলাদেশে তাদের স্বাধীনতা নেই। বাংলাদেশের রাজনীতি আর বিশ্বের অন্য দেশের রাজনীতি এক নয়।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি আবার গণঅভ্যুত্থানের হুঙ্কার দিচ্ছে। অথচ তাদের গতকালের সমাবেশে পাঁচ শ’ থেকে সাত শ’ লোকের উপস্থিতি হয়েছে। রোজার দিনে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে বিএনপি। জনগণ যে আন্দোলনে থাকে না, সেখানে গণঅভ্যুত্থান হয় না। তাদের নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। পথ হারিয়ে পদযাত্রা-মানববন্ধনে পরিণত হয়েছে তাদের কর্মসূচি। তাদের গণঅভ্যুত্থান আর দাঁড়াতে পারবে না।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপি গুজব তুলছে- এ কথা জানিয়ে কাদের বলেন, নির্বাচন দেবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের আগে বা পরে হোক তাদের ভরাডুবি অনিবার্য। লন্ডনের ফরমায়েশ এদেশে চলবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ।