অন্যান্য বছর এমন সময় আলুর দাম থাকে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম। বাজার ভর্তি থাকে নতুন আলুতে। অথচ এ বছর নতুন আলুও কম, কিন্তু দামও অনেক বেশি। বেশি মানে গত বছরের তুলনায় চার গুণ প্রায়। আলুর দামে ক্রেতার পাশাপাশি স্বয়ং বিক্রেতাও অবাক। দুই পক্ষের বিস্ময়ের মধ্যে একাধিক জেলার চাষিরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এবার আলু পরিপক্ক হতে সময় লাগছে। তাই বাজারে সরবরাহ কম। অন্যান্য সময় বছরের এ সময়ে আগাম আলু চলে আসলে কদর হারায় পুরানটা। কিন্তু এখনও বাজারে পুরান আলুর প্রাধান্যই চলছে। দাম নির্ধারণ করছে গত বছরের উৎপাদন। নতুন আলু তুলনামূলক কম, থাকলেও আকারে ছোট। একজন উদ্যানতত্ত্ববিদও একই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, আলু রোপনের সময় বৃষ্টি এ সমস্যার প্রধান কারণ।
কয়েকজন চাষিও জানিয়েছেন আগাম আলু পরিপক্ক হতে এবার সময় লেগেছে বেশি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে মাঠ প্রস্তুতে বিলম্ব এর প্রধান কারণ। অক্টোবরের শেষে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে ঝড় বৃষ্টিতে আলুর ক্ষেত প্রস্তুতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয় কৃষককে। নভেম্বরের শুরুতে মৌসুমি লঘুচাপ এবং মধ্যভাগে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র কারণেও টানা বৃষ্টি হয়। এরপর ডিসেম্বরের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবেও বেশ বৃষ্টি হয়। আলুর রোপন করা ক্ষেত ডুবে যায়। অন্যদিকে বছরজুড়ে আলুর দাম বেশি থাকার কারণে কৃষককে এবার বেশি টাকা খরচ করে চাষ করতে হয়েছে। আবার চাষিরা আলুর দাম বেশি পেয়ে অপরিপক্ক অবস্থাতেই তুলে ফেলছেন। এতে সার্বিক উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, মাস ছয়েক ধরে আলু ও পেঁয়াজের দর নিয়ে নানা কিছুই ঘটেছে। ভারত রপ্তানি কার্যত বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশি পেঁয়াজ দাম কমাতে পারছে না। আগের বছরের চেয়ে আড়াই থেকে তিন গুণ দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। আলু যে কোনো সময় চলে আসবে, এমন ধারণা থেকে অনুমতিপত্র নিয়েও সেভাবে আলু আমদানি করেননি ব্যবসায়ীরা। তবে অনেক খুচরা ব্যবসায়ী বলেছেন, ভারতের আমদানি করা আলু তাড়াতাড়ি পচে যায়।
আলু ও পেঁয়াজের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আরও তৎপর হতে হবে। পেঁয়াজের সংরক্ষণ ব্যবস্থা দ্রুত আরও আধুনিক করা দরকার। সে সঙ্গে আলু উৎপাদনব্যবস্থা আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করা যায় কীভাবে সে চেষ্টা জারি রাখতে হবে। কারণ ভাত বা চালের পর আলুর ওপর আমাদের নির্ভরতা বেশি।