পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসিতে নতুন বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বর্তমানে কেউ এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে সেই বিনিয়োগ লভ্যাংশের মাধ্যমে তুলতে সময় লাগতে পারে প্রায় ৬৭ বছর, যা বিনিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী বিষয়টি বুঝতে না পেরে উচ্চ দামে শেয়ার কিনে পরে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন, ফলে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাইস-আর্নিংস (পিই) রেশিও ৪০-এর নিচে থাকলে তা বিনিয়োগের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ ধরা হয়। অথচ, তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইস-ক্রিমের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে পিই রেশিও রয়েছে ৬৬.৯৯। অর্থাৎ বিনিয়োগের বিপরীতে অর্থ তুলতে সময় লাগবে প্রায় সাত দশক। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২০.৯০ টাকা বেড়ে ৭৮.১০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ টাকায়। অর্থাৎ এই সময়ে দর বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পুনরায় কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার দর বাড়ানো হচ্ছে, যার ফলে নতুন বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, “আনুমানিক দেড় বছর আগে কোম্পানিটির শেয়ার দর কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমি নিজেও সে সময় কোম্পানিটির শেয়ার কিনে ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। তবে দ্রুত বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে পেরেছিলাম। এখন আবার একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।” ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.জি.এম সাত্তিক আহমেদ শাহ বলেন, “কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দিন দিন কোম্পানিটির আয়ও কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২৪) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০.৯১ টাকা, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২৪) কমে দাঁড়িয়েছে ০.৬১ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে আয় কমেছে ৩৩ শতাংশ।
তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিমের পরিশোধিত মূলধন ৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৩৫ লাখ, যার মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩৮.৬৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২২.৮২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৮.৫২ শতাংশ শেয়ার। সুতরাং লাভেলোর শেয়ার কেনার আগে, বিনিয়োগকারীদের উচিত কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, বাজারের চাহিদা, এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করা।