দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের সড়ক ও রাস্তায় যানবাহনের হর্ণ, মাইকিং, মধ্যরাতে বিয়ের অনুষ্ঠানের পটকাবাজিতে হচ্ছে ব্যাপক শব্দ দূষণ। অতিমাত্রায় শব্দ দূষণের ফলে ঘটছে স্বাস্থ্যহানির মতো ঘটনাও। প্রতিনিয়ত এমন শব্দ দূষণ হলেও নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি। শব্দ দূষণ নীরব ঘাতকের কাজ করলেও তা অজানা জনসাধারণের পাশাপাশি অনেক সচেতন মহলেরও।
আইন অমান্য করে সড়কে গাড়ি চালকরা ইচ্ছেমত হর্ণ ও সাইরেন বাজিয়ে শব্দ দূষণ করছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, শব্দ দূষণের ফলে শিশুসহ সব বয়সের মানুষের ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি লোপ পেতে থাকে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের সামনের সড়কসমূহে গাড়ির হর্ণের কারণে শব্দ দূষণ হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শ্রবণসীমা পেরিয়ে অস্থিরতায়। হচ্ছে পাঠেও অমনোযোগী ।
সম্প্রতি সাদার্ন ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষক নগরীর চকবাজারে বেশকিছু গাড়ির উপর জরিপ চালিয়ে দেখতে পান, যেখানে সড়কে শব্দ দূষণের পরিমাণ ৬০ ডেসিবেল থাকার কথা সেখানে শব্দ দূষণের পরিমাণ ১১০ থেকে ২০০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ধরা হলেও নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের আশেপাশের সড়কগুলোতে ব্যাপকভাবে শব্দ দূষণ হচ্ছে। এর ফলে ভর্তিকৃত রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গাড়ি চালকদের একটা বিশ্বাস ক্রমাগত বাড়ছে যে, যানজট যত বেশি হর্ণ তত জোরে বাজালে সামনে থেমে থাকা গাড়ি চলতে থাকবে।
আগে সাইরেন থাকতো শুধু অ্যাম্বুলেন্সে এবং অতি প্রয়োজনীয় ও জরুরী কাজে নিয়োজিত বিশেষ কিছু সরকারি গাড়িতে। এখন, কালো কালো রঙের দানবগোছের কালো রঙে আবৃত জানালা ও উইন্ডস্ক্রিনের সরকারি গোছের প্রতিটি গাড়িতেই বোধহয় সাইরেন অথবা সাইরেন জাতীয় হর্ণ লাগানো থাকে। চান্স পেলেই রাস্তায় হর্ণ বাজায়। এতে সড়ক ও রাস্তায় ব্যাপক হারে ঘটে শব্দ দূষণ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: আবদুস সাত্তার বলেন, অতিমাত্রায় শব্দ দূষণের ফলে গর্ভবতী মহিলাদের সন্তানদের জন্মগত ত্রুটি, উচ্চ রক্তচাপ, বুক ধরফড়, অনিদ্রা, কানে ঝি ঝি, মাথা ব্যথাসহ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। দীর্ঘদিন একই অবস্থায় থাকতে থাকতে মানসিক রোগেরও জন্ম হতে পারে।
ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।