রাজধানীতে কখন কোথায় ঈদের জামাত

একমাস সিয়াম সাধনার পর শনিবার বাংলাদেশে উদযাপিত হবে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানীতে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে জাতীয় ইদগাহ ময়দানে, সকাল সাড়ে ৮টায়। প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন। এ জামাতে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ।

ঈদ জামাতের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ইদগাহ মাঠ। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রধান ঈদ জামাত ঘিরে কয়েক স্তুরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ইদগাহ মাঠ পরিদর্শন করে জঙ্গি হামলাসহ অন্যান্য নিরাপত্তার কোন হুমকি নেই বলে আশ্বস্তও করেছেন।

আবহাওয়া প্রতিকূল হলে বা অন্য কোনও কারণে জাতীয় ইদগাহ মাঠে জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এবারও মসজিদটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায়, এর এক ঘণ্টা পর পর তিনটি জামাত এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথম জামাত : সকাল ৭টায়
প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, সিনিয়র পেশ ইমাম বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মুকাব্বির থাকবেন মো. ইসহাক, মুয়াজ্জিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

দ্বিতীয় জামাত : সকাল ৮টায়

ইমাম : হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী, পেশ ইমাম বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মুকাব্বির থাকবেন হাফেজ মো. আব্দুল মান্নান, খাদেম বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

তৃতীয় জামাত : সকাল ৯টায়

ইমাম থাকবেন ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী, মুফাসসির, ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মুকাব্বির: হাফেজ মো. আতাউর রহমান, সাবেক মুয়াজ্জিন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

চতুর্থ জামাত : সকাল ১০টায়

চতুর্থ জামাত হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমাম হিসেবে থাকবেন হাফেজ মাওলানা মো. এহসানুল হক, পেশ ইমাম বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মুকাব্বির থাকবেন মো. শহিদ উল্লাহ, চিফ খাদেম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত : সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে

সর্বশেষ এ জামাতে ইমাম হিসেবে থাকবেন হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম, পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মুকাব্বির থাকবেন হাফেজ মো. জাহিনুল ইসলাম, খাদেম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

তাপদাহের কারণে ইদগাহ মাঠে থাকবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক

এবারের ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পর্যাপ্ত অজুখানা, শৌচাগার, নারীদের আলাদা পথ রাখার পাশাপাশি খাবার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পুরো মাঠে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।

গতবারের তুলনায় এবার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বেশি রাখা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এবার চিকিৎসক বেশি রাখা হয়েছে। কারণ প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে যান, তিনি যেন দ্রুত চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন। সিভিল সার্জনসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আলাদা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র করা হয়েছে।

সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ব্যাপক মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন দক্ষিণ সিটির মেয়র।

কেমন থাকবে ঈদের দিনের আবহাওয়া—

৫ এপ্রিল থেকে টানা তাপদাহের পারদ ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। তীব্র দাবদাহ থেকে সহসাই মুক্তি পেতে যাচ্ছে মানুষ। শনিবার ঈদের ছুটিতে সারাদেশে বৃষ্টির কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঈদের দিন দেশের কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হতে পারে, আর এতে কমে যাবে তাপমাত্রা।

অধিদপ্তরের পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে, আগামী দুই দিন (শনি-রোববার) বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। তবে পরবর্তী তিন দিনে আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ও বৃষ্টির প্রবণতা কমে যাবে।

জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে আনা যাবে না

নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ইদগাহ মাঠে জায়নামাজ ছাড়া অন্য ব্যাগ জাতীয় কিছু আনা যাবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। শুক্রবার সকালে জাতীয় ইদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি এ কথা জানান।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে নতুন কোনো হুমকি নেই। তবে শোলাকিয়া ঈদগাহে অতীতের দুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

দেয়াশলাই-লাইটার সঙ্গে না আনার অনুরোধ

জাতীয় ঈদগাহে আসার সময় দেয়াশলাই অথবা লাইটার সঙ্গে না আনার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের কারণে সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান মেয়র।

রাজধানীতে যেসব স্থানে ঈদে জামাত হবে

এবার ঢাকার ১ হাজার ৪৩৫টি মসজিদ ও ১৮৯টি ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল ৮টায় এবং ৯টায় দুটি জামাত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় হবে জমিয়তে আহলে হাদিসের প্রধান জামাত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মসজিদে সকাল ৮টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে সকাল ৮টায় এবং ফজলুল হক মুসলিম হলের পূর্ব পাশের খেলার মাঠে সকাল ৮টায় জামাত হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের জামাত হবে সকাল ৭টায় (বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে)। আবহাওয়া ভালো না থাকলে বা বৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত তিনটি মসজিদে ঈদ জামাত হবে। আজিমপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার বায়তুন নূর জামে মসজিদে ঈদের জামাত হবে সকাল ৮ টায়।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদ জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এছাড়া মগবাজারের বিটিসিএল (সাবেক টিঅ্যান্ডটি) কলোনির জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এছাড়া গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে সকাল সাড়ে ৬টা, সাড়ে ৭টা ও ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। লালবাগ শাহী মসজিদে সকাল ৮টা ও ৯টায় ঈদের দুটি জামাত হবে। পুরান ঢাকার তারা মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ও ৯টায় হবে ঈদের জামাত। সোবহানবাগ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় হবে ঈদ জামাত।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছয়টি জামাত হবে। মারকাজুল ফিকরিল ইসলামি (বড় মসজিদ) মসজিদে সকাল ৭টায়, সকাল সোয়া ৭টায় সি ব্লকের উম্মে কুলসুম জামে মসজিদে, সাড়ে ৭টায় এফ ব্লক জামে মসজিদে, ৮টায় জি ব্লকের বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে ঈদ জামাত হবে। কে ব্লকের মদিনাতুল উলুম মসজিদে সকাল সোয়া ৮টায় এবং এন ব্লকের ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত হবে।

এছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টা ও সাড়ে ৯টায়, ধানমন্ডি ইদগাহ জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, মিরপুর দারুস সালাম এলাকার মীর বাড়ি আদি (মাদবর বাড়ি) জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সকাল ৯টায়, মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের হারুন মোল্লাহ্ ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৭টায়, মতিঝিলের আরামবাগের দেওয়ানবাগ শরিফে সকাল ৮টা ও সাড়ে ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

দারুস সালামের মাতবর বাড়ি জামে মসজিদে, সকাল সাড়ে ৭টায় ও সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদ জামাত হবে। এলিফ্যান্ট রোডের তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়, বায়তুল আমান জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়, ইদগাহ মাঠে সকাল ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।