রণজিৎ গুহ চলে গেলেন

নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার পথিকৃৎ

ভারতের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ মারা গেছেন। শনিবার (২৯ এপ্রিল) ভোরে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।  রণজিৎ গুহের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি।  বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানা গেছে, শনিবার ভোর ৩টার দিকে মারা যান তিনি।  আগামী ২৩ মে ১০০ বছরে পা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর।  তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এই ইতিহাসবিদ। এ সময় পাশে ছিলেন তাঁর জার্মান স্ত্রী মেখঠিল্ড।

ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহের প্রয়াণে এক শোকবার্তায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা লিখেছেন, ‘প্রবাদপ্রতিম রণজিৎ গুহর মৃত্যুতে আমি আমার গভীর শোক প্রকাশ করছি। রণজিৎ গুহ ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে সুদূর প্রসারী কাজ করেছেন।  পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ছাত্র ও অনুরাগীরা আছেন।  গুহর প্রয়াণে জ্ঞানচর্চার পৃথিবীতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো।  তার স্ত্রী মেখঠিল্ড গুহসহ আত্মীয়, শিক্ষার্থী ও অনুরাগীদের আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

১৯২৩ সালের ২৩ মে বাংলাদেশের বরিশালের বাখরগঞ্জের সিদ্ধকাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রণজিৎ গুহ।  একসময় কলকাতায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গুহ।  সিপিআইয়ের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি।  হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত অনুপ্রবেশের বিরোধিতায় ১৯৫৬ সালে দল ছাড়ার তিন বছর পর তিনি ভারতও ছাড়েন।

গুহ প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিলেন।  অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে তিনি অধ্যাপনা করেন।  তিনি একাধিক বই লিখেছিলেন।  রণজিতের সবচেয়ে সুপরিচিত বই হচ্ছে ‘এলিমেন্টারি আসপেক্টস অব পিজেন্ট ইনসার্জেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, যা ঔপনিবেশিক ভারতের আগেকার লিখিত ইতিহাসের অনেক অধ্যায়কে প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড় করায়।

নিম্নবর্গের ইতিহাস সাধনার অন্যতম পথিকৃৎ, ঔপনিবেশিক ভারতে কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে লেখা একটি বইয়ের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের ইতিহাসচর্চার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।  দীপেশ চক্রবর্তী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের মতো নামকরা ইতিহাসবিদরা তার ছায়ায় নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চাকে বিকশিত করেছেন।

তাঁকে নিয়ে নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, ‘বিশ শতকের সবচেয়ে সৃজনশীল ভারতীয় ঐতিহাসিক।’