বাংলা সাহিত্যের সব বই অনুবাদের চেষ্টা করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

মাস ব্যাপি বইমেলার উদ্ধোধন

বাংলা সাহিত্যের সব বই অনুবাদের চেষ্টা করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হয়তো একটা দুইটা বই অনুবাদ করি, সেটা না।  বাংলা সাহিত্যের যত বই বের হবে বিভিন্ন ভাষায় সেগুলো অনুবাদ হতে থাকবে।  সেই ব্যবস্থাটাই আমাদের করতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি।  কাজেই বাংলা একাডেমি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলে এই উদ্যোগটা নিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব অনুবাদ হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের এবং বিভিন্ন ভাষায় আমাদের সাহিত্য অনুবাদ হতে হবে।  তাহলে বিশ্বের মানুষ আমাদের কথা জানতে পারবে।’

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা ভাষা মধুর ভাষা।  রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়া যাবে না, বলা হলো।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাদ দিয়ে কিভাবে বাংলা সাহিত্য হবে।  সেখানেও আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে।  এমনকি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়ও একটা মুসলমানি ভাব দেওয়ার চেষ্টা করা হলো সেটিও হলো।’

সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে ডিজিটাল যন্ত্রপাতিসহ আরও বেশি প্রযুক্তিগত সুবিধা নেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন কেউ বই পড়তে চায় না।  তাই হাঁটতে-চলতেও যাতে শুনতে পারে এমন অডিও বই করা উচিত, ডিজিটাল ভার্শন করা উচিত।  অনলাইনে লাইব্রেরির সুবিধা নেওয়া যেতে পারে।’

ভাষণ শেষে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এর আগে বিকেল ৩টার দিকে বইমেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছান তিনি।  সাথে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহেনা।

এর আগে বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে এবং রূপা চক্রবর্তী ও শাহাদাত হোসেন নিপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নূরুল হুদা।

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও ভাষাপ্রেমী-বইপ্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।  বইগুলোর হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি, অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পাঠ বিশ্লেষণ, আমার দেখা নয়াচীন-পাঠ বিশ্লেষণ, কারাগারের রোজনামচা- পাঠ বিশ্লেষণ, হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য লেটার অব সাবিত্রী ।

এ ছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে এবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন, আমার রাজনীতি’ প্রকাশিত হবে, যার প্রথম খন্ডের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।  বাংলা একাডেমি বিভিন্ন জেলায় যে মেলাগুলোর আয়োজন করেছে গত বছর, সেসব সংকলন সাত খন্ডের প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি।  এ সংকলনের প্রথম খন্ডটির মোড়ক উন্মোচনও  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী মঞ্চে করেন।

বুধবার থেকে শুরু হয়ে মাসজুড়ে বইমেলা চলবে।  গত দুই বছর করোনার সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু করা সম্ভব হয়নি।  ফলে দুই বছর পর ফেব্রুয়ারির শুরুর দিনে মাঠে গড়াল প্রাণের বইমেলা।

এ বছরের বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে।  একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বা স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।

বইমেলার আঙ্গিক ও বিন্যাসে এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দিরগেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।  গতবারের প্রবেশপথটি বাহির পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।  এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরও ৩টি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে।

বইমেলা উপলক্ষে গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, গতবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি স্টল এবং ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল।  পাঠক, দর্শক এবং প্রকাশকদের সম্মিলিত আহবান ছিল এবারের মেলায় যেন তাদের দৃশ্যমান অংশে সন্নিবেশ করা হয়।  আমরা আশা করি, ২০২৩-এর বইমেলার বিন্যাস সবার জন্য মনঃপুত ও বাস্তবসম্মত হয়েছে।