চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চারদিকে হৈচৈ ফেলে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ। এ ঘটনায় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করে। পরে তার বাবার মামলার প্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্তাভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপর। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর হত্যারহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তারা।
জানা যায়, নিহত ওই নারীর নাম আমেনা বেগম বলে। এছাড়াও আটককৃত দুজন হলেন আমেনার স্বামী ইয়াসির আরাফাতের বন্ধু মো. নাহিদ ও মো. ইরফান। তাদেও দুজনকে খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়ি থেকে আটক করে পিবিআই। এ দুজনের মধ্যে ইরফান রাঙামাটি জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন।
২১ অক্টোবরের পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত বুধবার তারা চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে আসামিরা খুনের কথা স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, আমেনার স্বামী ইয়াসির আরাফাত গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফোন করে নাহিদকে জানান তিনি দুবাই থেকে এসেছেন। ১ অক্টোবর রাতে ইয়াসির আমেনাসহ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বন্ধু ইরফানের বাড়িতে যান। নাহিদ আগে থেকে সেখানে ছিলেন। রাত তিনটার দিকে টানেলে ঘুরতে বের হওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরে ইরফান তাদের আনোয়ারার একটি পাহাড়ে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর আমেনা ও ইয়াসিরের মধ্যে ঝগড়া হয় বিয়ে নিয়ে।
একপর্যায়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ সদস্য ইরফান আমেনাকে ছুরিকাঘাত করেন। কিছুক্ষণ পর আমেনার মৃত্যু হলে তিনজনে মিলে মরদেহ নালার মধ্যে ফেলে দেন। পরবর্তীতে দুবাইয়ে পালিয়ে যান স্বামী ইয়াসির আরাফাত।
পুলিশ জানায়, আমেনার এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তার আগের সংসারে দুই সন্তান ছিল। ইয়াসির আরাফাতের সংসারে তার আরো একটি সন্তান রয়েছে। তবে ইয়াসিরের পরিবার আমেনাকে মেনে নেয়নি। এ কারণে আমেনাকে নগরের বাকলিয়ার তক্তারপুল এলাকায় একটি বাসায় রাখতেন।
ইয়াসির দুবাইপ্রবাসী। কিছুদিন আগে তিনি দেশে আসেন। স্ত্রী আমেনাকে না জানিয়ে করেন আরেকটি বিয়ে। পরে সেটি আমেনা জানতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন জানান, গ্রেপ্তার দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বাদী ও নিহতের বাবা কামাল উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্বামী বন্ধুদের সহায়তায় খুন করেছে। তাকে বিদেশ থেকে ধরে এনে বিচারের আওতায় আনা হোক।