পুলিশের ‘সাজানো’ মামলার শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী!

কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদ

চট্টগ্রামে কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের করা ‘সাজানো’ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বিপন্ন হতে চলেছে। গুরুতর এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা। যিনি জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত। মো. মোস্তাকিম নামে ওই শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে উল্টো তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপরই ‘হামলার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ফটকের সামনে কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। এ সময় ওই এলাকায় যানজট সৃষ্টি হলে সেখান থেকে সরাতে পুলিশ আন্দোলকারীদের ওপর বলপ্রয়োগ করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানা গেছে। আন্দোলনরত রোগী ও স্বজনদের পুলিশ লাঠিপেটা করার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে। এ নিয়ে একাাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করেছে। পুলিশের এমন ‘অতি উৎসাহী’ ভূমিকার প্রতিবাদ করতে গিয়ে রোষানলে পড়েন মাদ্রাসা ছাত্র মোস্তাকিম।

ঘটনার দিন (১০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাঁচলাইশ থানায় উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে আন্দোলনকারী অজ্ঞাত ৬০ জনের বিরুদ্ধে ‘সরকারি কাজে বাধা দান, পুলিশের ওপর হামলা’র অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। বুধবার এ মামলায় মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

গ্রেপ্তার হওয়া মোস্তাকিমের মা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল বিভাগে পড়াশোনা করে। তার ওপর যখন পুলিশের নির্যাতন চলছিল তখন চমেক হাসপাতালে আমার ডায়ালাইসিস চলছিল। পরে ঘটনাস্থলে এসে শুনি পুলিশ আমার ছেলেকে বেধড়ক মেরেছে। আটক করে থানায় নিয়ে তার ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করেছে বলে ছেলে আমাকে কেঁদে কেঁদে বলেছে। আমার ছেলে নির্দোষ এবং নিরীহ। পুলিশের ওপর সে কোনো হামলা করেনি।’

মোস্তাকিমের মা নাসরিন আরও বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর আজাদী বাজারে। তার স্বামীর নাম মৌলানা খালেদ আহমদ। তিনি বেঁচে নেই। মোস্তাকিম তার একমাত্র পুত্র সন্তান। এক কন্যা সন্তান থাকলেও সে প্রতিবন্ধী। গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি হলেও বর্তমানে তারা থাকেন হাটহাজারী উপজেলার লালিয়ারহাট এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। একমাত্র ছেলে মোস্তাকিমের টিউশনির টাকায় চলে তার সংসার।’

সাজানো মামলার অভিযোগ নাকচ করে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দীন মজুমদার বলেন, ‘কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়েছে সেটির নেতৃত্ব দিয়েছে মোস্তাকিম। পুলিশ আন্দোলনকারী কিছু নারীর ওপর হামলা করেছে বলে গুজব ছড়িয়েছে সে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে আমার কলার ধরে টান দেয়, একটি বোতামও ছিড়ে ফেলেছে।’ আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর মোস্তাকিমের ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি নাজিম উদ্দীন মজুমদার বলেন, ‘থানা কার্যালয়ে তার ওপর কোন নির্যাতন করা হয়নি। তবে ঘটনাস্থলে সে আমার ওপর হামলা করায় কিছু পুলিশ সদস্য তাকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে।

মানবাধিকার আইনজীবী এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অতিউৎসাহী ভূমিকার ব্যাপারে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি। সরকারের সাংবিধানিক একটি মানবাধিকার সংগঠন আছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আর্কষণ করেছি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।’