নাস্তা না করায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগ, ২৫২ জনকে অব্যাহতির পর ৫৯ জনকে শোকজ
আতঙ্কে সারদায় প্রশিক্ষণরত এসআইরা
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই দাবি-পাল্টা দাবিতে ছেয়ে গেছে পুরো দেশ। এবার এই দাওয়া-দাবির প্রভাব সারাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে ছাড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত এসআই’দের উপর।
গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসআই পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় বিবেচনায় এই নিয়োগ হয়েছে অভিযোগ করে তা বাতিলের দাবি জানায় দলটি।
বিএনপির এই দাবি তোলার পরপরই শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে একযোগে ২৫২ জন ক্যাডেট উপ-পরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়াও শোকজ করা হয়েছে ৫৯ জন এসআইকে। এছাড়াও তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের সকলকেই শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) প্রশিক্ষণরত এই এসআইদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২৩ সালে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে নিয়োগের জন্য ৮২৩ জনকে চূড়ান্ত করে তাদের পাঠানো হয় সারদার পুলিশ একাডেমিতে। ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট হিসাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল।
এদিকে এক-চতুর্থাংশ চাকরি হারানোর পর আতঙ্কে দিন পার করছেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত অন্যান্য ক্যাডেট উপ-পরিদর্শকরা। আরও ১০ জনকে দেওয়া শোকজ নোটিসের পর এই আতঙ্ক যেন অনেকটাই বেড়ে গেছে আসআই’দের মনে। কারণ আগে যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়, তাদের হাতেও এমন নোটিস এসেছিল। কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়েছে, ‘প্রশিক্ষণ ক্লাসে বসা নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন তারা’।
কোন নোটিস না পেয়েও আতঙ্কে থাকার কারণ তুলে ধরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রশিক্ষণার্থী দেশ বর্তমান’কে বলেন, আমরা গত বছরের ৪ নভেম্বর সারদায় ঢুকেছি। এরপর ১১ মাস ২০ দিন প্রশিক্ষণ করেছি। প্রতিটি দিন ভোর ৪টা থেকে শুরু করে রাত ৯ টা পর্যন্ত অমানুষিক পরিশ্রম করে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আগামী ৪ নভেম্বর আমাদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তিনি হতাশ কন্ঠে আরও বলেন, এমন সময়ে এতগুলো সহকর্মীকে একসঙ্গে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এখন যারা সারদায় আছেন, তাদের প্রতিটা সেকেন্ড কাটছে আতঙ্কে। শুনছি, এই অব্যহতির তালিকা আরো বড় হবে।
শোকজ লেটার পাওয়া একজন এসআই বলেন, লেটারে অভিযোগ করা হয়েছে, আমরা গত ১৮ অক্টোবর ক্লাসরুমে বসা নিয়ে হট্টগোল করেছি। অথচ এমন কিছুই সেদিন ঘটেনি।
অপর দিকে, নাশতা না করাই যেন কাল হয়ে দাড়াঁলো অব্যাহতি দেওয়া ২৫২ জন ক্যাডেট উপ-পরিদর্শককের। তাদের অভিযোগ পত্রে নাশতা না খেয়ে হইচই করে মাঠের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টিকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
তবে এমন কোনো কিছুই ঘটেনি বলে দাবি করছেন অব্যাহতি পাওয়া এসআই’রা।
নোটিস পাওয়া আরো এক আসআই বলেন, “আমাদের ১০ জনকে অন্যদের সঙ্গে নিয়মিত পার্সি প্যারেডে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের সঙ্গে আরও ৫০ জন আছেন। তাদেরও পার্সি প্যারেড প্রশিক্ষণ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে শোকজ পাওয়া মানেই অব্যাহতির তালিকায় চলে যাওয়া। কারণ এর আগে অব্যাহতি পাওয়া ২৫২ জনের সঙ্গেও এমন ঘটনাই ঘটেছে। তাদেরও শোকজ করার পর অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) মো. তারেক বিন রশিদ কারণ দর্শানোর ওই নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন।
তবে চেষ্টা করেও পুলিশ সুপার মো. তারেক বিন রশিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।