জেলেদের জন্য বাছুর: উপজেলায় বরাদ্দ, বঞ্চিত নগর

জেলেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এর সুফল পাচ্ছে না নগরের জেলেরা।  মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ এর আওতায় চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলার জেলেদের জন্য বকনা বাছুর (গরু) বরাদ্দ থাকলেও নগরের জেলে পরিবারগুলোকে রাখা হয়েছে প্রকল্পের বাইরে।  এদিকে গত আট বছরে মৃত্যুজনিত ও পেশা পরিবর্তনের কারণে জেলে কমেছে প্রায় আট হাজার।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার মনে করছে শহর এলাকায় জেলে নেই, তাই শহরের জেলে পরিবারগুলো এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়নি।  এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে অন্যদের।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন এবং অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে নেওয়া হয় ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’।  প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য উপকূলীয় জেলে পরিবারে বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।  ২০২০ সালের অক্টোবর একনেকে চার বছরমেয়াদী প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করলেও কাজ শুরু হয় পরের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। আগামী বছরের জুনে শেষ হচ্ছে প্রকল্পের কাজ।

দেশের ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, আনোয়ারা, ও বাঁশখালী উপজেলার দুই শত ৫০ জন জেলের জন্য এ প্রকল্পের আওতায় একটি করে মোট দুইশত ৫০টি বকনা বাছুর (ছোট গরু) বরাদ্দ থাকলেও নগর এবং আরও ১০ উপজেলার জেলে পরিবার এ প্রকল্পের বাইরে রয়েছে।  প্রতি বকনা বাছুরের পেছনে সরকারের খরচ পড়ছে ২৫ হাজার টাকা। পরবর্তী পর্যায়ে আরও দুইশত জেলেকে একটি করে বকনা বাছুর বিতরণের কর্মসূচি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী নগরে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা চার হাজার ৭৮৭ জন আর নগরের বাইরে ১৫টি উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮০ জন।  সবমিলে চট্টগ্রাম জেলায় জেলের সংখ্যা ৫১ হাজার ৮৬৭ জন।  জেলা মৎস্য অফিসের ২০১৫ সালে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, নগর এবং নগরের বাইরে জেলের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৫৬৩ জন।  সে হিসেবে জেলে কমেছে সাত হাজার ৬৯৬ জন।  জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী দেশ বর্তমানকে বলেন, মৃত্যুজনিত এবং পেশা পরিবর্তনের কারণে জেলের সংখ্যা কমেছে।

চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক জেলে রয়েছে দক্ষিণের উপজেলা বাঁশখালীতে।  প্রকল্পের আওতাভূক্ত পাঁচ উপজেলার মধ্যে বাঁশখালীতে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১১ হাজার ৬৮৬ জন।  এছাড়া সীতাকুণ্ডে পাঁচ ১৩০ জন,আনোয়ারায় পাঁচ হাজার ৬৮৯ জন, সন্দ্বীপে ছয় হাজার ৮৭২ জন, মীরসরাই উপজেলায় দুই হাজার পাঁচশত ২৬ জন জেলে রয়েছে।  উপকূলীয় এই পাঁচ উপজেলার মোট ৩১ হাজার ৯৩৪ জন জেলের মধ্যে একেবারেরই আর্থিক দূরাবস্থাসম্পন্ন দুইশত ৫০ জন জেলে পাচ্ছে একটি করে বকনা বাছুর।  ইতোমধ্যে আনোয়ারা এবং মীরসরাইয়ে একশতটির মধ্যে ১৭টি করে ৩৪টি বিতরণ করা হয়েছে।  আগামী ১২ মার্চ সন্দ্বীপে বিতরণ করার কর্মসূচি রয়েছে।  বাঁশখালীতে এখনও মাঠ পর্যায়ে তালিকা তৈরীর কাজ চলছে।  সীতাকুন্ড উপজেলা মৎস্য অফিসার কামাল উদ্দীন চৌধুরী জানান, তালিকাভূক্ত জেলেদের মাঝে আগামি ২০ মার্চ বকনা বাছুর বিতরণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নগরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে চার হাজার ৭৮৭ জন।  এছাড়া নগরের বাইরে অন্য ১০ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১০ হাজার ৩৫৯ জন।  নগরের উপকূলীয় এলাকা কাট্টলী, পতেঙ্গা, ফিরিঙ্গীবাজারসহ আরও বেশ কিছু এলাকায় সমুদ্রগামী জেলে থাকলেও তাদের ভাগ্যে জুটছে না বকনা বাছুর।  জেলার পাঁচ উপজেলার জেলেরা প্রকল্পের আওতাভুক্ত হলেও অন্য ১০ উপজেলা এবং নগরের বিপুল সংখ্যক জেলেকে প্রকল্পের বাইরে রেখে সরকারের ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি পুরোপুরি সুফল বয়ে আনবে না মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।  তবে রাজস্বভুক্ত সরকারের তিন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর উপকূলীয় পাঁচ উপজেলার জেলেসহ জেলার নিবন্ধিত সকল জেলেই যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে তাতে ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা।

জেলা মৎস্য অফিসার ফারহানা লাভলী জেলেদের জন্য গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরে বলেন, মা ইলিশ না ধরার জন্য প্রতি বছরের অক্টোবরে প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল, ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন মাছের প্রজননের সময় ২৭ হাজার ২৩ জনকে ৮৬ হাজার কেজি করে চাল, জাটকা না ধরার জন্য ফেব্রুয়ারি হতে মে পর্যন্ত চার মাসব্যাপী ১০ হাজার ১৫০ জনকে একশত ৬০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করা হয়ে থাকে।  ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় পঁচ উপজেলায় ৫০টি করে দুইশত ৫০টি জেলেকে বকনা বাছুর বিতরণ করা হচ্ছে।  প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সমুদ্রগামী জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।