গ্যাসের প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের ঠিকাদার পাওয়া যাচ্ছে না
চট্টগ্রামে অপেক্ষায় রয়েছে ৭৯ হাজার মিটারের আবেদন
গ্যাসের অপচয় কমানো ও আবাসিক গ্রাহকদের অতিরিক্ত ব্যয় থেকে রক্ষা করতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প নিয়েছিল কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। প্রথম দফায় চট্টগ্রামে আবাসিকে ৬০ হাজার মিটার বসানো হয়। প্রায় ১৭ হাজার গ্রাহক প্রথম দফায় প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছে। এরপর দ্বিতীয় দফায় আরও এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয় কেজিডিসিএল। কিন্তু ঠিকাদার না পাওয়ার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে এই প্রকল্পের কাজ আটকে আছে।
জানা গেছে, এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য দ্বিতীয় প্রকল্পের অনুমোদন হয় ২০২১ সালের ১৮ মে। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য টেন্ডার (দরপত্র) আহবান করা হয়েছিল গত বছর। ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দেয়। কিন্তু যাচাই-বাছাইকালে যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় দুটি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার বাতিল হয়ে যায়। প্রকল্পটির জন্য সম্প্রতি আবার পুনঃদরপত্রের (রি-টেন্ডার) আহবান করেছে কেজিডিসিএল। কিন্তু রি-টেন্ডার প্রক্রিয়া কবে সম্পন্ন হবে, কবে মিটার বসবে, তা জানাতে পারছে না সংস্থাটি।
জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক কেজিডিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. নাহিদ আলম দেশ বর্তমানকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা ঠিকাদার পাচ্ছি না। ইতোমধ্যে আমরা একবার টেন্ডার আহবান করেছি। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দিলেও কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় তা বাদ হয়ে যায়। এখন আবার রি-টেন্ডার আহবান করবো। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, প্রিপেইড মিটারের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ হাজার গ্রাহক আবেদন করেছেন। এসব গ্রাহকের জন্য মিটার প্রয়োজন হবে প্রায় ৭৯ হাজার। তবে আরও ২১ হাজার মিটারের জন্য আবেদন জমা নেবে কেজিডিসিএল। ১ লাখ মিটারে প্রায় ১৫ হাজার সংযোগ আওতায় আসবে।
জানা গেছে, এক লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ফলে প্রতিটি মিটারে খরচ পড়ছে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। তবে গ্রাহককে বিনামূল্যে এসব মিটার প্রদান করা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতি চুলায় একটি করে মিটার স্থাপন করা হয়। প্রিপেইড মিটারের জন্য গ্রাহকদের কেজিডিসিএল এর ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হয়। ‘ আগে এলে আগে পাবেন’ নীতিতে প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হবে। যারা আগে আবেদন করেছেন, তারা আগে মিটার পাবেন। এখন নগরীর বাসিন্দাদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে। পরে নগরীর বাইরের আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের কারণে গ্রাহকদের অনেক টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এতে মাসে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার খরচ হচ্ছে। অথচ নন-মিটারে দুই চুলায় ১ হাজার ৮০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে গ্রাহক টাকা অনুপাতে গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
নগরীর হালিশহর এলাকার শাহানারা বেগম নামে একজন গ্রাহক বলেন, ‘গ্যাস ব্যবহার করি বা না করি, প্রতিমাসে এক হাজার ৮০ টাকা বিল দিতে হচ্ছে। আবার অনেক সময় দিনে কয়েক ঘণ্টা গ্যাস থাকে না। এভাবে মাসে ৩০০ টাকার গ্যাসও ব্যবহার করা হয় না। সে অনুপাতে হিসেব করতে গেলে প্রিপেইড মিটারই ভালো হয়। কারণ যতটুকু ব্যবহার করবো, তত টাকা বিল আসবে। অতিরিক্ত কোন চার্জ আসবে না।’
কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে আবাসিক গ্রাহক খাতে দৈনিক প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা গেলে অনেক গ্যাস সাশ্রয় হবে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকা হলো চট্টগ্রাম নগর, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, কর্ণফুলী ও কাপ্তাই। এসব এলাকায় মোট গ্রাহক রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার। এর মধ্যে আবাসিক সংযোগ আছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি।