গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘জনতার বাজার’। এই বাজারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের তুলনায় কেজিতে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ টাকা কমে মিলছে গরুর মাংস। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষদের এখান থেকে প্রয়োজন অনুসারে পণ্য কিনতে ভিড় করতে দেখা গেছে।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ টেলিফোনে বলেন, “ছাত্ররা ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করবে বলে তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। আজ ছাত্ররা গরুর মাংস বিক্রি করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের দিক নির্দেশনাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।”
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে গাইবান্ধা শহরের জিরো পয়েন্টে (পুরাতন জেলখানা মোড়) জনতার বাজার শুরু করেন ছাত্ররা।
আজ সকাল ১১টার দিকে ছাত্রদের ‘জনতার বাজারে’ গিয়ে দেখা যায়, সবজির দোকানের পাশেই বসানো হয়েছে মাংসের দোকান। মাংস ক্রয়ের টোকেন হাতে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ক্রেতারা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে টোকেন হাতে ক্রেতাদের লাইনে দাঁড় করানো হয় বলে জানান আয়োজকরা। এসময় লাইন ছাড়াও মাংস কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
কম দামে মাংস কিনতে আসা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাসেল হোসাইন বলেন, “বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা। ছাত্রদের এই বাজার থেকে ৮০ টাকা কম কেজিতে মাংস কিনতে পরেছি। মাংসের মান যথেষ্ট ভালো।”
হোটেল কর্মচারী সবুজ মিয়া বলেন, “এখানে থেকে কয়েকদিন ধরে কম দামে সবজি কিনেছি। আজ গরুর মাংস বিক্রির খবর শুনে এসেছি। ৫০০ গ্রাম মাংস ৩১০ টাকায় কিনেছি। টাটকা মাংস কম দামে পেয়ে ভালো লাগছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজার সিন্ডিকেটের কারণে আমাদের দেশে সবকিছুরই দাম বেশি। ছাত্ররা যদি কম দামে সবজি এবং মাংস বিক্রি করতে পারে, তাহলে অন্য ব্যবসায়ীরা পারেন না কেন? আমাদের নৈতিক চরিত্রে পরিবর্তন আনা উচিত।
গাইবান্ধার ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা জানান, জনতার বাজারে আজই প্রথম সবজির পাশাপাশি গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয়েছে। তিন ঘণ্টার মধ্যে সব মাংস বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে টাকা ৬২০। স্থানীয় বাজার থেকে যা কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কম। একজন ক্রেতাকে ২৫০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ দুই কেজি পর্যন্ত মাংস দেওয়া হচ্ছে।
তারা আরও জানান, আমরা ৯৪ হাজার টাকায় স্থানীয় হাট থেকে একটি ষাঁড় গরু ক্রয় করেছি। কোনো মুনাফা ছাড়াই মাংস ও সবজি বিক্রি করছি। তবে, ক্রেতাদের চাহিদ অনেক। সেই তুলনায় মাংস অনেক কম হয়েছে। সবার সমর্থন থাকলে আমরা প্রতি সপ্তাহে একটি অথবা দুটি গরুর মাংস বিক্রির এই আয়োজন অব্যাহত রাখতে চাই।
‘জনতার বাজার’-এর দায়িত্বে থাকা ছাত্র প্রতিনিধি জিসান বলেন, “আমাদের জনতার বাজারে স্থানীয় বাজার থেকে ১০ টাকা কমে কুমড়া ৪০টাকায়, ২০ টাকা কমে বেগুন ৩০ টাকায়, ১০ টাকা কমে বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ২০টাকা কমে করলা ৪৫ টাকা, ১০ টাকা কমে মুলা ৩০ টাকা এবং ৩০ টাকা কমে পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।”
গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহামুদ আল হাসান বলেন, “জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ছাত্ররা তাদের জনতার বাজার শুরু করেছে। মূলত কাঁচাবাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে তাদের এই আয়োজন।”
প্রসঙ্গত, গত ৩০ অক্টোবর সকালে গাইবান্ধায় “জনতার বাজারের” উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। সেদিন থেকেই সেখানে সবজি বিক্রি করছেন ছাত্ররা। স্থানীয় বাজারে সবজির দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।