চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন নগরবাসী। বিভিন্ন এলাকায় দিনের পর দিন পানি আসছে না। আবার যেটুকু আসছে, লবণাক্ততার কারণে সেটুকুও মুখে তোলা, ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ঠিকভাবে গোসলও করতে পারছেনা বলে অভিযোগ নগরবাসীর। এছাড়া এই লবণাক্ত পানি পান করে নগরবাসী ডাইরিয়া, চর্মরোগ সহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এদিকে মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সংকট পুরোপুরি কাটবে না বলে জানান ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী।
গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এসময় দেখা যায়, নগরবাসীদের অনেকে পানি কিনে পান করছেন। আবার কেউ দূরদূরান্তের পুকুর ও গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে আনছেন।
ইতিমধ্যে অতিষ্ঠ হয়ে ওয়াসার পানির সরবরাহ সংকট নিরসন ও পানিকে লবণমুক্ত করার দাবিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার শতাধিক বাসিন্দা। মানববন্ধন শেষে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেয় তারা।
তাতে বলা হয়, নগরে বেশ কিছু এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ কম। এদিকে তিন মাস আগে থেকে পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার বিষয় নজরে আসার পরও কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। লবণাক্ত এই পানি পান করে ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।
মানববন্ধনে ফরিদাপারা নিবাসী চল্লিশোর্ধ্ব নাসিমা আক্তার বলেন, ওয়াসার পানি ফোটালেও লবণাক্ততা কমছে না। তাই বাধ্য হয়ে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। এখন প্রতিদিনই প্রায় আড়াইশ টাকার পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন পানি কেনার মতো সামর্থ্য নেই তার ।
সংকটের বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দেশ বর্তমানকে বলেন, সমুদ্রের পানি নদীতে ঢুকে পড়ছে। এ কারণে ছয় ঘণ্টা পানি উত্তোলন করা হচ্ছে না। পানির উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। এ ছাড়া কাপ্তাই রাবার ড্যাম থেকে কর্ণফুলী নদীতে শ্যাওলা ঢুকে পড়ছে। রাসায়নিকের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এটি পুরোপুরি সমাধান করা যাবে না। তাঁর দাবি, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি পুরোপুরি পরিশোধন করলে খরচ বেশি পড়বে। পানির দামও বেড়ে যাবে। আগে বছরে তিন থেকে চার দিন পানিতে এই লবণাক্ততার সমস্যা হতো। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে একটু সমস্যা হয়েছে।
তবে পানির এই লবণাক্ততা ও সংকটের জন্য ওয়াসার গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন।
তিনি বলেন, হ্রদে পানি কমে যাওয়া কিংবা নদীতে শ্যাওলা আসার ঘটনা পুরোনো। কিন্তু এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান অথবা এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে। সমস্যা সমাধানে তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া লবণাক্ত পানি পান করে ডাইরিয়া, চর্মরোগ সহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীতে শ্যাওলা জমার কারণে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার থেকে এখন আসছে ২০ কোটি লিটারের কম পানি। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণেও পানি সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর আগে ১৩ এপ্রিল সংস্থাটির ওয়েবসাইটে একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের হ্রদে পানির স্তর ৩৩ ফুট পর্যন্ত কমে গেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় পানির স্তর ১০৯ ফুট পর্যন্ত থাকে। বর্তমানে স্তর ৭৬ ফুট। এ কারণে হ্রদ থেকে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। মোহরা ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে হালদা নদী থেকে উত্তোলিত পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরো জানা যায়, বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ সাত হাজার সাতশ ৬৭টি। ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে সংস্থাটি পানি সরবরাহ করে। বেশির ভাগ লাইন পুরোনো হওয়ার কারণে এমনিতেই সংকটে থাকতে হয় গ্রাহকদের। লাইনে লিকেজ বা ছিদ্রের কারণে পানি নষ্ট হয়। এখন সংকট আরও প্রকট হয়েছে।