অবৈধভাবে সাগরপথে ইতালি: শীর্ষ তিনে বাংলাদেশ

অবৈধভাবে সাগরপথে ইতালিতে পৌঁছে আশ্রয় চাওয়া বিদেশিদের মধ্যে শীর্ষ তিনে আছে মিশর, তিউনিশিয়া ও বাংলাদেশ।  চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১১ হাজার ২৯ জন বাংলাদেশি সাগরপথে ইতালি পৌঁছেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৭১ হাজার ৭৯০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী সাগরপথে ইতালি পৌঁছেছে।  এ সংখ্যা আগের বছরের ওই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার জন বেশি।

লিবিয়া থেকে ইতালি যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতেই একেকজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর খরচ হয়েছে আড়াই হাজার ইউরো (প্রায় আড়াই লাখ টাকা) থেকে তিন হাজার ইউরো (প্রায় তিন লাখ টাকা)।  এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে মিশরীয় ২২ শতাংশ। এরপর আছে তিউনিশীয় ২০ শতাংশ ও বাংলাদেশি ১৫ শতাংশ।  মিশরীয়দের ৮৯ শতাংশ লিবিয়া থেকে এবং বাকিরা তুরস্ক থেকে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করে।  গত সেপ্টেম্বরে সাগরপথে ইতালিতে পৌঁছানো বাংলাদেশিদের প্রায় সবাই লিবিয়া থেকে যাত্রা করে।

যাতায়াতের রুট প্রসঙ্গে ইউএনএইচসিআর জানায়, তারা পূর্ব লিবিয়া থেকে রওনা হয়েছে।  বেনগাজি থেকে তবরুক, মিসর সীমান্তের কাছে উম্মে সাদ থেকে তারা রওনা হয়েছে।  তাদের ৮০ শতাংশই সিসিলি উপকূলে পৌঁছে।  বাকিরা পৌঁছে ক্যালাব্রিয়াতে।  তারা মূলতঃ মাছ ধরার নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে।  বড় নৌকাগুলোতে প্রায় ৫০০ যাত্রী তোলা হয়েছে।  কাঠের ছোট নৌকাগুলোতে ৩০ জন পর্যন্ত যাত্রী তোলা হয়েছে।  প্রধানত বাংলাদেশিদের ছোট নৌকায় করে নেওয়া হয়েছে।  ছোট নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিতে তাদের আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত দিতে হয়েছে।

ইউএনএইচসিআরের হিসাব অনুযায়ী, এদের মধ্যে ১০ হাজার ৭১৩ জন পুরুষ ও চারজন নারী।  এছাড়া ৩১২ জন শিশুর ২৮৮ জনই অভিভাবকহীন।  বাংলাদেশ ছাড়াও মিশর ও সিরিয়া থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিভাবকহীন শিশু রয়েছে আশ্রয়প্রার্থীদের তালিকায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকে সহজে আশ্রয় পেতে নিজেদের বয়স ১৮ বছরের কম বলে দাবি করে।  তারা বাংলাদেশ বা নিজ নিজ দেশ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে রওনা হয়।  লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় তারা পাসপোর্ট ফেলে দেয়।  এতে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোও কঠিন হয়ে পড়ে।

সম্প্রতি ইতালিতে কয়েক শ’ বাংলাদেশি তাদের বয়স কম দেখিয়ে পাসপোর্ট দেওয়ার দাবিতে দূতাবাসে হামলা চালায়।  তাদের স্বজনরা পাসপোর্টের দাবিতে ঢাকায় অভিবাসন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন করে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাগরপথে ইতালিতে পৌঁছার পর তারা নিজেদের যে বয়স বলেছিল সে অনুযায়ী পাসপোর্ট দিতে হলে একেকজনের বয়স পাঁচ, ১০ বছর বা তারও বেশি পরিবর্তন করতে হবে।  এতে তাদের আগের পাসপোর্টের তথ্যের সঙ্গে বড় ধরনের গরমিল দেখা দেবে।  এছাড়া ইতালিতে ‘বোন টেস্টের’ ব্যবস্থা আছে।  এটা করা হলে ওই ব্যক্তিদের প্রকৃত বয়স বেরিয়ে আসবে।  এতে বাংলাদেশকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে।